Pages

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাওবা ও পাপ মোচনকারী কিছু আমল

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাওবা ও পাপ মোচনকারী কিছু আমল

তাওবা হলো অতীতের গুনাহের অনুশোচনা, দুনিয়ার কোন উপকারিতা অর্জন অথবা ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য নয় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই সার্বক্ষণিকভাবে সে গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার উপর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। জবরদস্তির মাধ্যমে নয় বরং শরী‘আতের বিধি-নিষেধ তার উপর বহাল থাকবে ততক্ষণ স্বেচ্ছায় এ প্রতিজ্ঞা করবে। ইবাদতসমূহের মধ্যে তাওবা অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাওবার আবশ্যকীয়তা, ব্যাপকতা ও তাতে নিয়মানুবর্তিতার পরিমণ্ডল থেকে পাপী-তাপী যেমন বহির্ভূত নয়, তেমনি আল্লাহর ওলীগণ ও নবীগণও তার পরিসীমা থেকে বাইরে নন। এটি সর্বাবস্থায় সর্বত্র সকলের জন্য প্রযোজ্য। তাওবা মানুষের জীবনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


তাওবার পরিচয়

তাওবা (توبة) শব্দের তা (تا) বর্ণে যবর ওয়া (واو) বর্ণে সুকুন যোগে গঠিত হয়। আভিধানিক অর্থ পাপ থেকে ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা, প্রত্যাগমন করা ইত্যাদি। বিশেষ পদে অর্থ অনুতাপ, অনুশোচনা। ড. মুহাম্মদ ড. হামিদ সাদিক বলেন:
التوبة: مصدر تاب ، الرجوع عن الذنب الندم على فعل الذنب ، وعقد العزم على عدم العودة إليه والتوجه إلى الله طلبا للمغفرة.
(‘তাবা (تاب) ক্রিয়া হতে তাওবা (توبة) হলো মাসদার। অর্থ পাপ থেকে ফিরে আসা। কৃতপাপের অনুশোচনা করা। পুনরায় না করার দৃঢ়সংকল্প করা।’ শব্দটি মহান সৃষ্টিকর্তার সত্তা ও তাঁর সৃষ্টিকুল বান্দাগণ উভয়ের সম্পর্কে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার জন্য এ মর্মে যে, তিনি স্বীয় মাগফিরাত (মার্জনা) ও রাহমাত (করুণা) সহকারে বান্দাহদের প্রতি করুণা দৃষ্টি প্রদান করেন অর্থাৎ তিনি বান্দাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَهُوَ ٱلَّذِي يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ ١٠٤ ﴾ [التوبة: ١٠٤]
‘তিনি স্বীয় বান্দাদের তাওবা কবুল করেন।’[1] 
এতে এ অর্থের প্রকাশ ঘটায় মূলত আল্লাহ তা‘আলার সাথে এই ক্রিয়াটির সম্বন্ধ স্থাপন তাঁর ক্ষমা-মাগফিরাত ও দয়া-রাহমাতের বহিঃপ্রকাশ। তবে উভয়টির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য শব্দটি আল্লাহর সাথে সম্বন্ধিত হলে আল-কুরআনে তা على সংযোজক صلة সহকারে ব্যবহৃত হয়। যাতে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও সমুন্নত অবস্থান প্রকাশ পায়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ثُمَّ تَابَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡ﴾ [المائ‍دة: ٧١]
 ‘অতঃপর আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হলে তাদের তাওবা কবুল করলেন।’ সূরা আল-মায়েদাহ:৭১।

কারও কারও মতে তাওবা অর্থ অনুতাপের সাথে পাপ পরিহার করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [النور: ٣١]
‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’  সূরা আন-নূর:৩১।
মুফতী মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান বলেন:
التوبة: هو الرجوع إلى الله بحل عقد الإصرار عن القلب ثم القيام بكل حقوق الرب.
‘অন্তর হতে গোনাহ না করার সংকল্পের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। অতঃপর প্রতিপালকের যাবতীয় বিধানকে পালন করা।’ কাওয়ায়িদুল ফিকহ,পৃ ২৩৯-২৪০।
‘আইনুল ইলম’ গ্রন্থে বলা হয়েছে:
التوبة تنزيه القلب عن الذنب وقيل الرجوع من البعد إلى القرب وفى الحديث: الندم هى التوبة.
‘তাওবার সংজ্ঞা হলো অন্তরালে পাপ মুক্ত করা। কারও কারও মতে দূরত্ব হতে নিকটে প্রত্যাবর্তন করা। কারণ, ‘অনুশোচনাই’ তাওবা। কাওয়ায়িদুল ফিকহ,পৃ ২৪০।
মুহাম্মাদ আলী আত-থানভী (রহ.) বলেন:
الندم على معصية من حيث هى معصية، مع عزم أن ألا يعود إليها إذا قدر عليها
কোনো পাপকাজে সেটি যে পাপ এ অনুভূতিতে অনুশোচনা করার সাথে সাথে সুযোগ পেলেও আর কখনোও না করার দৃঢ় সংকল্প করা। কাশশাফু ইসতিলিহাতিল ফুনুন,খ.১, পৃ. ২১৮।
মাজমা‘উস সুলুক গ্রন্থে বর্ণিত আছে,
التوبة شرعا هى الرجوع إلى الله تعالى مع دوام الندم وكثرة الاستعفار
শরী‘আতের পরিভাষায় তাওবা হলো স্থায়ী অনুশোচনা ও অধিক ক্ষমা প্রার্থনার সাথে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি প্রত্যাবর্তন করা। কারও কারও মতে তাওবা মূলত অনুশোচনা অর্থাৎ তাওবার বৃহৎ স্তম্ভই হলো অনুশোচনা। কাশশাফু ইসতিলিহাতিল ফুনুন,খ.১, পৃ. ২১৮।

যে চৌদ্দটি আমলে রিজিক বাড়ে

মুসলিম মাত্রেই বিশ্বাস করেন যে তার আয় ও উপার্জন, জীবন ও মৃত্যু,  এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায় যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু। আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন: “তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।” [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ১৫]
আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের মধ্যে কুরআন ও হাদীস রোমন্থিত ১৪টি আমলের কথা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথম আমল: তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা। আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তাঁর নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২-৩]
অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং আনুগত্য দেখাবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে।
দ্বিতীয় আমল: তাওবা ও ইস্তেগফার করা। অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বাড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন: “আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।” [সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১২]
হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।” [আবূ দাঊদ : ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১] [1]
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।” [বাইহাকী : ৬৩৬; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত।]
তৃতীয় আমল: আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন : আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।” [বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯]
চতৃর্থ আমল: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। যেমনটি অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে। তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা‘ব রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে।” [তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ (আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি ‘হাসান’ সহীহ।)]
পঞ্চম আমল: আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা বাড়ে বৈ কি। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযকদাতা।” [সূরা আস-সাবা’, আয়াত : ৩৯]
ষষ্ঠ আমল: বারবার হজ-উমরা করা। হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।” [তিরমিযী : ৮১৫; নাসাঈ : ২৬৩১]
সপ্তম আমল: দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা। মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।” [বুখারী : ২৮৯৬]
অষ্টম আমল: ইবাদতের জন্য ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়া। আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।” [তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭]
নবম আমল: আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা। আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা ঘটে। যেমনটি অনুধাবিত হয় নিচের আয়াত থেকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০০]
আয়াতের ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখ সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহুদ বলেন, স্বচ্ছলতা অর্থ রিজিকে প্রশস্ততা।
দশম আমল: আল্লাহর পথে জিহাদ। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।” [মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বাইহাকী : ১১৫৪; শু‘আবুল ঈমান : ১৯৭৮৩]
একাদশ আমল: আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। সাধারণভাবে আল্লাহ যে রিজিক ও নিয়ামতরাজি দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা এবং তাঁর স্তুতি গাওয়া। কারণ, শুকরিয়ার ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ০৭]
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা শুকরিয়ার বদৌলতে নেয়ামত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য আল্লাহর বাড়ানোর কোনো সীমা-পরিসীমা নাই।
দ্বাদশ আমল: বিয়ে করা। আজকাল মানুষের দুনিয়ার প্রাচুর্য ও বিলাসের প্রতি আসক্তি এত বেশি বেড়েছে, তারা প্রচুর অর্থ নেই এ যুক্তিতে প্রয়োজন সত্ত্বেও বিয়ে বিলম্বিত করার পক্ষে রায় দেন। তাদের কাছে আশ্চর্য লাগতে পারে এ কথা যে বিয়ের মাধ্যমেও মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তো তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুমা বলতেন, ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।’
ত্রয়োদশ আমল: অভাবের সময় আল্লাহমুখী হওয়া এবং তার কাছে দু‘আ করা। রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তা‘আলাই রিজিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।” [সূরা আল-মু‘মিন, আয়াত : ৬০]
এ আয়াতে আল্লাহ দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন। যাবৎ না তা কবুলে পথে কোনো অন্তরায় না হয়।  যেমন ওয়াজিব তরক করা, হারাম কাজে জড়ানো, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাপ পরিচ্ছদ পরা ইত্যাদি এবং কবুলকে খানিক বিলম্বিতকরণ। আল্লাহর কাছে দু‘আয় বলা যেতে পারে: “হে রিজিকদাতা আমাকে রিজিক দান করুন, আপনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পবিত্র সুপ্রশস্ত রিজিক চাই। হে ওই সত্তা, দানের ঢল সত্ত্বেও যার ভাণ্ডারে কমতি হয় না। হে আল্লাহ, আমাকে আপনি আপনার হালাল দিয়ে আপনার হারাম থেকে যথেষ্ট করে দিন আর আপনার দয়া দিয়ে আপনি ছাড়া অন্যদের থেকে যথেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা দিয়েই সন্তুষ্ট বানিয়ে দিন। আর যা আমাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।”
অভাবকালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো হবে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন।” [তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮]
চতুর্দশ আমল: গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর সদা অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করে যাওয়া। গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা- এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয় যেমন পূর্বোক্ত আয়াতগুলো থেকে অনুমান করা যায়। তবে সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকার জন্য আসি নি। তাই দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে উচিত হবে আখিরাতকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয়া। আমাদের এদেন অবস্থা দেখে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী।” [সূরা আল-আ‘লা, আয়াত : ১৬-১৭]
আর পরকালের মুক্তি ও চিরশান্তিই যার প্রধান লক্ষ্য তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে তুষ্ট হতে চেষ্টা করা। যেমন : হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আ‘স রাদিআল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “ওই ব্যক্তি প্রকৃত সফল যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাসও নয়) পর্যাপ্ত পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও করেছেন।” [মুসলিম : ২৪৭৩; তিরমিযী : ২৩৪৮; আহমদ : ৬৫৭২]
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের এসব উপায়-উপকরণ যোগাড় করে রিজিক তথা হালাল উপার্জনে উদ্যোগী ও সফল হবার তাওফীক দান করেন। তিনি যেন আপনাদের রিজিক ও উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেন।
আমীন!!



[1]. (শায়খ উসাইমীন বলেন, সনদগত দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল কিন্তু এর মর্ম ও বক্তব্য সহীহ বা সঠিক। কুরআনের আয়াত ও হাদীসে এই বক্তব্যের সমর্থন বিদ্যমান। এই হাদীস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ বিন বায বলেন, সর্বোপরি হাদীসটি তারগীব ও তারহীব তথা মানুষকে আখিরাতের আগ্রহ বা ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। কারণ, এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহে একাধিক বক্তব্য পাওয়া যায়। [ফাতাওয়া নূর আলাদ-দারবি (হাদীসের ব্যাখ্যা ও তার হুকুম।]     
ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার
---- quraneralo .com

জিনদের নাম, পরিচয় ও তাদের কাজ

জিনদের নাম, পরিচয় ও তাদের কাজ

মানুষ যেই জিনিস সম্পর্কে জানেনা, সেটাকে বেশি ভয় করে, কারণ অজানা জিনিস দ্বারা ক্ষতির আশংকা থাকে। সেজন্য অজানা, অন্ধকার জিনিসের ব্যপারে মানুষ ভয় পায়। অনেকে ‘জিন’ ভয় পায়, অথচ একে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা যেমন একটা সৃষ্ট জীব, জিনেরাও আল্লাহর একটা বিশেষ সৃষ্ট জীব। তবে সাপের গায়ে পা দিলে যেমন আমাদের ক্ষতি হতে পারে, ঠিক তেমনি জিন সম্পর্কে না জানলে তাদের থেকে আমাদের বিভিন্ন ধরণের ক্ষতি হতে পারে। তাই জিন সম্পর্কে যারা ভয় পান, তাদের উচিৎ জিন জগত সম্পর্কে ভালো করে জানা। আর তাদের ক্ষতি বা ফিতনাহ থেকে বাঁচার জন্য ক্বুরআন ও হাদীসে যেই নিয়ম ও আমল দেওয়া আছে, সেইগুলো নিয়মিত করা। তাহলে জিন সম্পর্কে ভয় আস্তে আস্তে ইন শা’আল্লাহ চলে যাবে আর তাদের থেকে সম্ভাব্য যেই ক্ষতি, তা থেকে বেঁচে থাকা যাবে। যাই হোক, ক্বুরআন ও হাদীসে বর্ণিত কিছু শয়তানের সংক্ষিপ্ত পরিচয় বর্ণনা করা হলো।
১) ‘ইবলিস’ – আদম আ’লাইহিস সালামকে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রনা দিয়ে যেই জিন আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিচ্যুত করেছিল, তার নাম হচ্ছে ইবলিস। আল্লাহ ইবলিসকে সরাসরি আগুন থেকে সৃষ্টি করেছিলেন, সে হচ্ছে প্রথম জিন, যেমন আদম হচ্ছেন প্রথম মানুষ। ইবলীস যে প্রথম জিন ছিলো, ক্বুরআনের এই আয়াত থেকে দলীল নেওয়া হয়েছে, “আল্লাহ বললেন, আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন (হে ইবলীস) তোকে আদমকে সেজদা করতে কে বারণ করল? সে (ইবলীস) বলল, আমি তার (আদমের) চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।” সুরা আল-আ’রাফঃ ১২।
হাসান আল-বসরী রাহি’মাহুল্লাহ বলেন, “ইবলীস কোন ফেরেশতা ছিলোনা, এমনকি এক মুহূর্তের জন্যেও নয়। সে হচ্ছে জিন জাতির পিতা, যেমন আদম আ’লাইহিস সালাম হচ্ছেন মানব জাতির পিতা।” সনদ সহীহ, তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৩/৮৯।
আদম আ’লাইহিস সালামকে সিজদা করতে অস্বীকার করে ইবলীস আল্লাহর সামনে অহংকার প্রদর্শন করে, এই কারণে সে ‘কাফের’ হয়ে চির জাহান্নামী ও আল্লাহর লানতপ্রাপ্ত হয়েছে। তার সন্তানদের কেউ ঈমানদার মুসলিম, আবার কেউবা কাফের, তাদের পিতা ইবলিসের অনুসারী। যারা কাফের জিন, তাদেরকে সাধারণভাবে ‘শয়তান’ বলা হয়। আদম আ’লাইহিস সালাম ও ইবলিসের কাহিনী সংক্ষেপে জানার জন্য আপনারা সুরা ত্বোয়া-হা-র ১১৫-১৩৫ নাম্বার আয়াতের তর্জমা ও তাফসীর পড়ুন।

(২) ‘খানজাব’ – খানজাব হচ্ছে বিশেষ একপ্রকার জিন, যারা মানুষ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন তাদেরকে নানান রকম চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দেয়, লোকদেরকে সালাত থেকে অমনোযোগী ও উদাসীন করে তোলে। এর ফলে তারা সালাতে ভুল করে, কত রাকাত পড়েছে মনে থাকেনা, কোনটা কি করছে সন্দেহে পড়ে যায়, সুরা-ক্বিরাতে উল্টা-পাল্টা করে। একারণে তাদের সালাতে সওয়াবও কমে যায়। তাই আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে যথাযথ খুশু (ভয়) ও খুজু (বিনয়, স্থিরতা) সহকারে মনোযোগী হয়ে সালাত আদায় করার জন্য।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সালাতের জন্য যখন আযান দেওয়া হয় তখন শয়তান সশব্দে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পলায়ন করে, যেন সে আযানের শব্দ না শুনতে পারে, আযান শেষ হলে সে আবার লোকালয়ে ফিরে আসে। (সালাতের জন্য মসজিদে) ইকামত আরম্ভ হলে (শয়তান) আবার পলায়ন করে। ইকামত বলা শেষ হলে পুনরায় উপস্থিত হয় এবং ওয়াসওয়াসা ঢেলে দিয়ে সালাত আদায়রত ব্যক্তি ও তার অভীষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যে সকল বিষয় তার স্বরণ ছিল না, সেই সব জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট করে সে বলতে থাকেঃ অমুক বিষয় স্বরণ কর, অমুক বিষয় স্বরণ কর। ফলে সেই ব্যাক্তি কত রাকাত সালাত পড়েছে, এমনকি সেটাও ভুলে যায়।” মুয়াত্তা মালিকঃ সালাত অধ্যায় ৩, হাদিসঃ ১৫২।
সালাতে ওয়াসওয়াসা প্রদানকারী এই শয়তানের নামই হচ্ছে খানজাব।
সালাতে শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে বাঁচার উপায়
সালাতে প্রথম রাকাতে কিরাত পড়ার পূর্বে “আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম” পড়বেন। আ’উযুবিল্ললাহ…দুয়া শুধু প্রথম রাকাতেই পড়া সুন্নত, এর পরের রাকাতগুলোর শুরুতে না পড়লেও হবে, তবে কেউ যদি চায় পড়তে পারবে। এই দুয়া পড়ে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়, কারণ সালাতে দাড়ালে খানজাব নামক শয়তান কুমন্ত্রনা দিয়ে সালাত নষ্ট বা ক্ষতি করতে চায়। সালাতের মাঝখানে সুরা-কেরাতে বা কত রাকাত, রুকু সেজদা নিয়ে শয়তান খুব বেশি ওয়াসওয়াসা দেয় বা সন্দেহে ফেলে দেয়, তাহলে কি করতে হবে?
সালাত ও কেরাতের মাঝে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পতিত ব্যক্তি যেই দুয়া করবেঃ “আ’ঊযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম”, এই দুয়া বলে তারপর বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবে (থুতু ফেলার মতো করে নিঃশব্দে ফুঁ দিবে, কিন্তু থুতু ফেলবেনা)।
উসমান ইবনুল আ’স রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! শয়তান আমার ও আমার সালাতের মাঝে অনুপ্রবেশ করে এবং কিরাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা (উপরে যা বলা হয়েছে) বলার নির্দেশ দেন, তিনি সেটা করার পর আল্লাহ তাঁকে সেটা থেকে মুক্ত করেন। মুসলিমঃ ৪/১৭২৯, ২২০৩।

(৩) ‘ওলহান’ – এরা হচ্ছে একপ্রকার শয়তান জিন, যারা মানুষকে ওযুর সময় ওয়াসওয়াসা দেয়। ওয়াসওয়াসা আক্রান্ত মানুষেরা ওযুতে ভুল বেশি করে, সন্দেহ পড়ে এক কাজ কয়েকবার করে, তবুও মনে সন্দেহ থেকে যায় ওযুর কোন অংগ ধোয়া বাকী আছে কিনা? এভাবে ওযুর সময় তারা পানি ও সময় অপচয় করে। অনেকেরতো এটা মানসিক রোগের মতো হয়ে যায়।
কি করতে হবে? এই ওয়াসওয়াসায় যারা আক্রান্ত, তারা মনোযোগের সাথে কোন পাত্রে নির্দিষ্ট পরিমান পানি নিয়ে বসে ওযু করবেন, টেপ ছেড়ে দিয়ে অমনোযোগী হলে বা তাড়াহুড়া করলে শয়তান সহজেই ওয়াসওয়াসা দিবে। অবশ্যই আল্লাহর নাম ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আস্তে ধীরে ওযু করা শুরু করবেন, তাড়াহুড়া করবেন না। প্রতিটা অংগ মনোযোগের সাথে উত্তমরুপে ধৌত হচ্ছে কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। আর কোন অংগ ধৌত করতে ভুলে গেলে, যদি নিশ্চিত হন আসলেই এমন হয়েছে তাহলে মেজাজ খারাপ না করে প্রথম থেকে ওযু শুরু করবেন না। শুধুমাত্র যেই অংগ থেকে ভুলে গেছেন, সেই অংগ থেকে আবার ধোয়া শুরু করবেন। আর ওয়াসওয়াসা অনুভত করলে এই দুয়া পড়বেনঃ “আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম”, এই দুয়া পড়ে শয়তান মনে কি ওয়াসওয়াসা দিচ্ছে, সেইদিকে কোন লক্ষ্য করবেন না। যেই অংগ থেকে ভুল করেছেন সেখান থেকে ওযু করবেন। মনোযোগী হয়ে, আল্লাহর প্রতি সন্তষ্টির জন্যে যত্নের সহিত ওযু করার অভ্যাস গড়ে তুললে আস্তে আস্তে শয়তানের বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারবেন ইন শা’আলাহ। মনে রাখবেন, এটা একটা মানসিক ব্যপার, আস্তে আস্তে মন ধীর-স্থির করার অভ্যাস করে এই ব্যাধি থেকে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে, আর তার জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করতে হবে।

(৪) ‘ক্বারীন’ – ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সংগী, প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জিন লেগে থাকে, সংগী হিসেবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “তোমাদের প্রত্যেককে জিনদের মধ্য হতে একজন ক্বারিন (সঙ্গী) দেওয়া হয়েছে।” সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “এমনকি আপনাকেও ইয়া আল্লাহর রাসুল?” তিনি বললেন, “হ্যা, কিন্তু এখন সে আমাকে শুধু ভাল কাজ করতে বলে।” সহীহ মুসলিমঃ ৭১৩৪।
ক্বারীন জিন সবসময় বান্দার অন্তরে খারাপ চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে। তারা মানুষের অন্তরে খারাপ কথা বা চিন্তা নিক্ষিপ্ত করতে পারে, কিন্তু কাউকে কোন কাজ করতে বাধ্য করতে পারেনা। এজন্যে ওয়াসওয়াসার শিকার হয়ে যে পাপ কাজে লিপ্ত হবে, তাকে তার শাস্তি ভোগ করতে হবে, কারণ সে লোভে পড়ে স্বেচ্ছায় খারাপ কাজে লিপ্ত হয়েছিলো। ক্বুরআনে আল্লাহ ক্বারীন জিনদের কথা সুরা ক্বফে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, (আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।) “মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিত আসবে। এ থেকেই তো তুমি টালবাহানা করতে। এবং শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে, এটা হবে সেই ভয় প্রদর্শনের দিন। প্রত্যেক ব্যক্তি আগমন করবে, তার সাথে থাকবে চালক ও কর্মের সাক্ষী। (তাকে বলা হবে), তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার কাছ থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ণ। তার সঙ্গী (আমলনামা লিপিবদ্ধকারী) ফেরেশতা বলবে, আমার কাছে যে আমলনামা ছিল, তা এই। (হে ফেরেশতারা!) তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে, যে বাঁধা দিত মঙ্গলজনক কাজে, সীমালঙ্ঘনকারী, সন্দেহ পোষণকারীকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য গ্রহণ করত, তাকে তোমরা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর। ‘ক্বারীন’ (তার সঙ্গী শয়তান) বলবে, “হে আমাদের পালনকর্তা! আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।” আল্লাহ বলবেন, “আমার সামনে তোমরা বাক-বিতন্ডা করো না, আমিতো পূর্বেই তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম। আমার কাছে কথা রদ-বদল হয় না, এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই।” সুরা ক্বফঃ ১৯-২৯।

(৫) ‘শয়তানের সাংগ-পাংগ’ – উমার রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেছেন, “শয়তানের চ্যালা হচ্ছে নয়টি। (১) যালিতুন, (২) অসাইন, (৩) লাকুস, (৪) আ’ওয়ান, (৫) হাফফাফ, (৬) মুররাত, (৭) মুসাইবিত, (৮) দাসিম, (৯) ওলহান।
যালিয়াতুন বাজারে থাকে। বাজারে থেকে সে তার পতাকা উড্ডয়ন করে। অসাইন মসিবত বা বিপদের মধ্যে থাকে। আওয়ান রাজা-বাদশাহদের সংগে থাকে। হাফফাফ মদের সংগে থাকে। মুররাহ গান-বাজনার সাথে থাকে। লাকুস ‘মাজুসী’ বা অগ্নি পূজারীদের সাথে থাকে। মুসাইবিত, সে এমন সংবাদ দেয় যা ভিত্তিহীন। দাসিম মানুষের ঘর-বাড়িতে থাকে। বাড়িতে প্রবেশের সময় কোন ব্যক্তি যদি বাড়ির লোকদেরকে সালাম না দেয়, তাহলে দাসিম নামক শয়তানের চ্যালা বাড়ির লোকদেরকে মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি করে দেয়, শেষ পর্যন্ত স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেয়, স্ত্রী খুলা করে স্বামী থেকে পৃথক হয়ে যায়, মারধর করে। ওলহান অযু, সালাত ও ইবাদতে ওয়াসওয়াসা দেয়।” ইবনে হাজার আসকালানী, আল-ইসতিদাদ লি-ইয়াওমিল মাআ’দ (পরকালের পাথেয়)।

(৬) ‘ইফরীত’ – ক্বুরআনের তাফসীরবিদগণ বলেছেন, “জিনদের মাঝে যারা অবাধ্য, বেহায়া, মাস্তান, দুষ্ট প্রকৃতির ও শক্তিশালী হয়ে থাকে, তাদেরকে ইফরীত বলা হয়।” আল-মুফরাদাত ফী গারিবিল ক্বুরআন। ইফরীত শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছেঃ শক্তিশালী জিন বা ভূত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “গতকাল রাতে আমার সালাত নষ্ট করার জন্য জ্বিনদের মধ্য হতে এক ‘ইফরীত’ (জিন) থু থু নিক্ষেপ করেছিল। তবে আল্লাহ তাআ’লা তার উপরে বিজয়ী হতে আমাকে সাহায্য করেছেন। সকালে তোমাদের সবাইকে দেখানোর জন্য আমি তাকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে চেয়েছিলাম। তারপর আমার ভাই সুলায়মানের দুয়া কথা আমার মনে পড়ল। (আমার ভাই সুলায়মান আল্লাহর কাছে এই বলে দুয়া করেছিলেন), “হে আমার মালিক, (আমি যদি কোনো ভুল করি তাহলে) তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তুমি আমাকে এমন এক সাম্রাজ্য দান করো, যা আমার পরে আর কেউ কোনোদিন পাবে না, তুমি নিশ্চয়ই মহাদাতা।” সুরা সোয়াদঃ ৩৫।” সহীহ বুখারীঃ ৭৫, সহীহ মুসলিমঃ ১১০৪।

(৭) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন শ্রেণীর জ্বিন রয়েছে। এক প্রকার জ্বিন সারাক্ষণ আকাশে উড়ে বেড়ায়, দ্বিতীয় প্রকার জ্বিনেরা সাপ ও কুকুর হিসাবে (লোকালয়ে) বিদ্যমান থাকে, আর তৃতীয় প্রকার জ্বিন পৃথিবী অভিমুখে অগ্রসরমান তথা পৃথিবীতে অবস্থান করে এবং এরা এক জায়গায় বসবাস করা সত্ত্বেও এখানে সেখানে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা করে।” আত-ত্বাবারী ও আল-হাকিম।

(৮) সালাতরত কোন ব্যক্তি ও তার সুতরার জায়গার মধ্য দিয়ে কালো কোন কুকুর হেঁটে গেলে তার নামায ভেংগে যাবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কালো কুকুর হচ্ছে শয়তান।” সহীহ মুসলিমঃ ১০৩২, তিরমিযীঃ ৩৩৮। একারণে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কালো কুকুর এবং কুকুরদের মাঝে যেইগুলো হিংস্র, সেগুলোকে হত্যা করতে বলেছেন। সহীহ মুসলিমঃ ৩৮১৩, আবু দাউদঃ ২৮৩৯।

দাজ্জালের মারাত্মক ফেতনা ও ঈসা (আঃ) এর আশ্চর্যজনক কাহিনী:



দাজ্জালের মারাত্মক ফেতনা ও ঈসা (আঃ) এর আশ্চর্যজনক কাহিনী:

নাওওয়ান ইবন সামআন কিলাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের আলোচনা করলেন এবং বিষয়টির ভয়াবহতা এবং নিকৃষ্টতা সব কিছু তুলে ধরেন। এমনকি আমাদের ধারণা হচ্ছিল যে, দাজ্জাল মনে হয় এই মুহূর্তে আমাদের খেজুর বাগানেই উপস্থিত রয়েছে।
নাওওয়াস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে ফিরে গেলাম। পরে বিকালে আবার তাঁর কাছে এলাম। তিনি আমাদের মাঝে দাজ্জালের ভীতির চিহৃ দেখে বললেন, তোমাদের একি অবস্থা?
আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি সকালে দাজ্জালের আলোচনা করেছিলেন এবং বিষয়টির ভীষণতা এবং নিকৃষ্টতা এমন উল্লেখ করেছিলেন যে, আমাদের মনে হচ্ছিল সে বুঝি খেজুর বাগানের কিনারে এসে হাজির।
তিনি বললেন, আমি তোমাদের জন্য দাজ্জাল ছাড়া অন্য কিছুর ব্যপারে অধিক আশংকা আমার রয়েছে। তোমাদের মাঝে আমার জীবদ্দশায় যদি দাজ্জালের আবির্ভাব হয় তাহলে আমিই তোমাদের পক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে বিতর্কে জয়ী হব। আর আমি যদি তোমাদের মাঝে না থাকি তখন যদি সে বের হয়, তবে প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের পক্ষে তার বিরুদ্ধে বিতর্ককারী হবে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার স্থলে আল্লাহ তাআ'লা নিজেই সহায়ক হবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
দাজ্জাল হল একজন যুবক মানুষ। তার চুল হবে অতিশয় কুকড়ানো ও চোখ তার স্থির। সে আবদুল উযযা ইবন কাতান এর মতো দেখতে হবে। তোমাদের কেউ যদি তাকে পায়, তবে সে যেন সুরাতুল কাহফ (১৮ নাম্বার সুরা) এর শুরুর দিকের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে। তিনি আরো বলেন, শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী অঞ্চল থেকে সে বের হবে। ডান দিক ও বাম দিক সে ফেতনা-ফাসাদের সৃষ্টি করে ফিরবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা তখন দৃঢ় থাকবে।
আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যে দিনটি হবে এক বছরের মত বড় সে দিন কি একদিনের সালাতেই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে বলে আপনি মনে করেন?
তিনি বললেনঃ না, বরং তোমরা এর জন্য (স্বাভাবিক দিনের পরিমান) আন্দায করে নিবে (এবং সে হিসাবমত সালাত আদায় করবে)।
আমরা বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! পৃথিবীতে দাজ্জালের গতি কত দ্রুত হবে?
তিনি বললেনঃ বায়ু তাড়িত মেঘমালার মত। সে কোন এক সম্প্রদায়ের কাছে আসবে। তাদেরকে সে নিজের দলে যোগ দেওয়ার জন্যে ডাকবে। কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করবে এবং তার দাবী প্রত্যাখান করবে। সে তখন তাদের থেকে ফিরে আসবে আর (যেই সম্প্রদায় দাজ্জালকে মানবেনা) তাদের সম্পদ দাজ্জালের পিছে পিছে চলে যাবে। তাদের হাতে আর কিছুই থাকবে না। তারপর সে আরেক সম্প্রদায়ের কাছে যাবে। সে তাদেরকে নিজের দিকে ডাকবে। তারা তার কথা গ্রহণ করবে এবং তাকে সত্য বলে স্বীকার করে নিবে। তখন সে আকাশকে বৃষ্টি ঝড়াতে আদেশ দিবে। তারপর (আল্লাহর ইচ্ছা ও হুকুম অনুসারেই মানুষের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ) সে অনুযায়ী বৃষ্টি নামবে। দাজ্জাল যমীনকে উদ্ভিদ জন্মাতে নির্দেশ দিবে যার ফলে ফসল হবে। বিকালে তাদের পশুপালগুলো পূর্বের চেয়েও লম্বা, কুঁজ, বিস্তৃত নিতম্ব, দুগ্ধপুষ্ট ওলান বিশিষ্ট হয়ে ফিরে আসবে।
তারপর দাজ্জাল এক বিরান ধবংসস্তূপের কাছে আসবে। সেটিকে লক্ষ্য করে সে বলবেঃ তোমার ধনভান্ডার বের করে দাও। তারপর সে এখান থেকে ফিরে আসবে আর যেভাবে রানী মৌমাছিকে ঘিরে ধরে অন্য মৌমাছিগুলি তার অনুসরণ করে থাকে, তেমনিভাবে সব ধনভান্ডার দাজ্জালের অনুসরণ করবে।
এরপর সে যৌবনে পরিপূর্ণ এক তরুন যুবককে তার দিকে আহবান জানাবে। (সেই যুবক তাকে না মানলে) সে তাকে তলোয়ারের আঘাতে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। পরে তাকে ডাকবে। যুবকটি (জীবিত হয়ে) হাস্যেজ্জল চেহারা নিয়ে এদিকে আসবে।
এমতাবস্থায় এদিকে ঈসা (আঃ) দুইজন ফেরেশতার ডানায় তাঁর হাত রেখে গেরুয়া রঙ্গের বসনে স্বেত-শুভ্র মিনারার কাছে দামেশকের পূর্ব দিকে অবতরণ করবেন। তাঁর মাথা নীচু করলে পানি ঝড়তে থাকবে আর তা উঠানে মোতির মত ফোটায় ফোটায় পানি পড়বে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঈসাঃ (আঃ) এর শ্বাস-প্রশ্বাস কাফেরদের মাঝে যাকেই স্পর্শ করবে, সেই মারা যাবে। আর দুই চোখের দৃষ্টি যেখানে গিয়ে শেষ হবে, সেখান পর্যন্ত তাঁর নিঃশ্বাসের বাতাস পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে তালাশ করবেন এবং লুদ (বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী একটি শহর) এর নগর দরওয়াজার কাছে তাকে পাবেন। তারপর তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন।
এরপর আল্লাহ যতদিন চান ঈসা (আঃ) এভাবে বসবাস করবেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআ'লা তাকে ওয়াহী পাঠাবেনঃ আমার বান্দাদেরকে তুর পাহাড়ে সরিয়ে নাও। আমি আমার এমন একদল বান্দা নামাচ্ছি যাদের সংগে লড়াই করার ক্ষমতা কারো নেই। এরপর আল্লাহ তাআলা ইয়াজুজ-মাজুজের দল পাঠাবেন। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার বিবরণ মত প্রতি ‘উচ্চ ভূমি থেকে তারা ছুটে আসবে’। তাদের প্রথম দলটি তাবারিয়া উপসাগর (শামে অবস্থিত একটি ছোট সাগর) অতিক্রম করা কালে এর মাঝে যা পানি আছে সব পানি তারা পান করে শেষ করে ফেলবে। এমন অবস্থা হবে যে, পরে তাদের শেষ দলটি যখন এই উপসাগর অতিক্রম করবে তখন তারা বলবে ‘এখানে এক কালে হয়ত পানি ছিল’। আবার তারা চলবে এবং বায়তুল মুকাদ্দাসে অধ্যায়তে যেয়ে তাদের এই যাত্রার শেষ হবে। তারা পরস্পর বলবে; পৃথিবীতে যারা ছিল তাদেরকে তো বধ করেছি এস এবার আসমানে যারা আছে তাদের শেষ করে দইে। তারপর তারা আসমানের দিকে তাদের তীর ছুড়বে। আল্লাহ তাআলা তাদের তীরগুলোকে রক্ত রঞ্জিত করে ফিরিয়ে দিবেন। ঈসা ইবন মারয়াম (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীগণ অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকবেন। তাদের অবস্থা এমন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে যে, আজকে তোমাদের কাছে একশত স্বর্ণ মুদ্রার যে দাম, তাদের কাছে তখন একটি ষাড়ের মাথা তার চাইতে অনেক উত্তম বলে মনে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর ঈসা (আ) ও তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর কাছে দুয়া করবেন। আল্লাহ তাআলা ইয়াজুজ মাজুজদের গর্দানে ‘‘নাগাফ’’ জাতীয় এক জীবানু মহামারিরূপে প্রেরণ করবেন। তারা সব ধবংশ হয়ে মরে যাবে যেন একটি মাত্র প্রাণের মৃত্যু হল। এরপর ঈসা (আঃ) ও তার সঙ্গীগণ পাহাড় থেকে নেমে আসবেন, কিন্তু তারা এব বিঘত পরিমান জায়গাও এমন পাবেন না, যেখানে ইয়জুজ-মাজুজের গলিত চর্বি, রক্ত ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে না আছে। তারপ ঈসা (আ) ও তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর কাছে আবার দুয়া করবেন। তখন আল্লাহ তাআলা উটের মত লম্বা গলা বিশিষ্ট এক প্রকার পাখি প্রেরণ করবেন। পাখিগুলি ইয়াজুজ-মাজুজদের লাশ উঠিয়ে নীচু গর্তে নিয়ে ফেলে দিবে। মুসলিমগণ তাদের ফেলে যাওয়া ধনুকে জ্যা, তীর এবং তুলীর সাত বছর পর্যমত্ম জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করবে। আল্লাহ তাআলা প্রবল বৃষ্টি করবেন শহর বা গ্রামের কোন বাড়িঘরই তা থেকে রক্ষা পাবে না। সমস্ত যমীন ধৌত হয়ে যাবে এবং তা আয়নার মত ঝক ঝকে হয়ে উঠবে।
পরে যমীনকে বলা হবে, তোমার সব ফল ও ফসল বের করে দাও, সব বরকত ফিরিয়ে দাও। এমন হবে যে সেদিন একটি আনার একদল লোক খেতে পারবে এবং একদল লোক এর খোসার নীচে ছায়া গ্রহণ করতে পারবে। দুধের মাঝেও এমন বরকত হবে যে, একটি দুগ্ধবতী উট বহুসংখ্যক লোকের একটি বড় দলের জন্যও যথেষ্ট হবে। একটি দুগ্ধবতী গাভী একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে। এদর উপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে, একটি দুগ্ধবতী ছাগল একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে।
এমন অবস্থায় তারা দিন জীবন-যাপন করতে থাকবে হঠাৎ আল্লাহ তাআলা এক বাতাস প্রবাহিত করবেন। এই বাতাস প্রত্যেক মুমিনের রূহ কবয করে নিয়ে যাবে। বাকী কেবল দুষ্টু লোকেরাই থেকে যাবে। তারা গাধার মত নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে নারী সঙ্গমে লিপ্ত হবে। আর এদের উপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
[সহিহ আত্-তিরমিজি, ফিতনা অধ্যায়, অধ্যায় নং-৩৩, হাদিস নং- ২২৪০ এর ভাবার্থ]

এক মিনিটে আপনি কি কি আমল করতে পারেন



এক মিনিটে আপনি কি কি আমল করতে পারেন

প্রশ্ন: আমরা অফিসে বা কর্মস্থলে ইবাদত-বন্দেগী ও নেককাজের তেমন কোন সময় পাই না। অফিসের পর বাকী যে সামান্য সময় পাই এর মধ্যে আমরা কি কি আমল করতে পারি এবং এ সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি?

উত্তর:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

সময় মানুষের জীবন। সময়কে কখনো অপচয় হতে বা অকাজে নষ্ট হতে দেয়ার মত নয়। প্রজ্ঞাবান ও বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে তার সময়ের সদ্ব্যবহার করে। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তি সময়কে অহেতুক কাজে বা অর্বাচীন কথায় ব্যয় করে না। বরং তিনি সময়কে প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও ভাল কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন। যে কাজ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে এবং মানুষের উপকার বয়ে আনে। জীবনের প্রতিটি মিনিটে আপনি একটি করে প্রস্তর স্থাপন করতে পারেন যা আপনার মর্যাদার ভবনকে উচ্চকিত করবে এবং যা দিয়ে আপনার জাতি সৌভাগ্যমণ্ডিত হতে পারবে। 

 আপনি যদি মর্যাদার শিখরে পৌঁছুতে চান এবং আপন জাতিকে সৌভাগ্যমণ্ডিত করতে চান তবে আরাম-আয়েশকে না-বলুন এবং অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করুন।

 এক মিনিট সময়ের মাঝে অনেক ভাল কাজ করা যেতে পারে এবং বিশাল সওয়াব পাওয়া যেতে পারে। শুধু আপনার জীবনের এক মিনিট সময় ব্যয় করে আপনি আপনার দানের পরিধি বাড়াতে পারেন, কোন কিছু উপলব্ধি করতে পারেন, কোন কিছু মুখস্থ করতে পারেন, যে কোন নেককাজ করতে পারেন। শুধু এক মিনিটেই আপনার ভালো কাজের আমলনামায় এই আমলগুলো লেখা হয়ে যাবে যদি আপনি জানেন কিভাবে এক মিনিট সময়কে কাজে লাগাতে হয় এবং বাস্তবে কাজে লাগান। কবি বলেন:

প্রতিটি মিনিটে বৃহত্তর কল্যাণে প্রবৃত্ত হও।

যদি তুমি এক মিনিটকে ভুলে যাও তবে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ভুলে যাবে; বরঞ্চ বাস্তবতাকে ভুলে যাবে।

• আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় এক মিনিটে আপনি যে যে আমলগুলো করতে পারেন নিম্নে এর কিছু প্রস্তাবনা পেশ করা হলো:

(১) এক মিনিটে আপনি সূরা ফাতিহা মনে মনে দ্রুতগতিতে ৩ বার পড়তে পারেন। কেউ কেউ হিসাব কষে দেখিয়েছেন একবার সূরা ফাতিহা পড়লে ৬০০ টিরও বেশি নেকি পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি তিনবার সূরা ফাতিহা পাঠ করেন তবে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় ১৮০০ এর বেশি নেকি হাসিল করবেন। এত নেকী আপনি এক মিনিটেই পাচ্ছেন।

(২) এক মিনিটে আপনি সূরা ইখলাস (ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) মনে মনে দ্রুতগতিতে ২০ বার পড়তে পারেন। এই সূরা একবার পাঠ করলে কুরআন শরীফের এক তৃতীয়াংশ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি এ সূরাটি ২০ বার পাঠ করেন তবে তা ৭ বার কুরআন পড়ার সমতুল্য। অতএব আপনি যদি এ সূরাটি প্রতিদিন এক মিনিটে ২০ বার পাঠ করেন তবে মাসে আপনার ৬০০ বার পাঠ করা হয় এবং বছরে ৭২০০ বার পাঠ করা হয়। যার সওয়াব ২৪০০ বার সম্পূর্ণ কুরআন পড়ার সমতুল্য।

(৩) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কিতাবের এক পৃষ্ঠা পাঠ করতে পারেন।

(৪) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কিতাবের ছোট একটি আয়াত মুখস্থ করতে পারেন।

(৫) এক মিনিটে আপনি নিম্নোক্ত দোয়াটি ২০ বার পড়তে পারেন।

لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

এর সওয়াব ইসমাঈল (আঃ) এর বংশের ৮ জন দাসকে আল্লাহর ওয়াস্তে মুক্ত করার সমান।

(৬) এক মিনিটে আপনি (سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِه) ১০০ বার পড়তে  পারেন। যে ব্যক্তি একদিনে এই দোয়াটি ১০০ বার পড়ে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয় না কেন।  

(৭) এক মিনিটে আপনি (سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، ) ও (سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ) ৫০ বার পড়তে পারেন। এ দুটি এমন বাক্য যা পড়তে খুব সহজ; আমলের পাল্লাতে অনেক ভারী হবে; রহমানের নিকটে অতি প্রিয়; যেমনটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম।

(৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: 
সুব্‌হানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আক্‌বার পাঠ করা যা কিছুর উপর সূর্য উদিত হয়েছে সবকিছু থেকে আমার নিকট অধিক প্রিয়।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম (২৬৯৫)]
আপনি এক মিনিটে বাক্যগুলো ১৮ বারের বেশি পড়তে পারেন। এ বাক্যগুলো আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এগুলো সর্বোত্তম কথা এবং আমলের পাল্লাতে এগুলোর ওজন অনেক বেশি হবে। যেমনটি এ মর্মে বর্ণিত সহীহ হাদিসসমূহে এসেছে ।

(৯) এক মিনিটে আপনি (لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ) (অর্থ- কোন উপায়-সামর্থ্য নেই, কোন শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া) ৪০ বারের বেশি পড়তে পারেন। এ বাক্যটির সওয়াব জান্নাতের জন্য সঞ্চিত অমূল্য রত্ন; যেমনটি বর্ণিত হয়েছে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে। একই ভাবে এটি কষ্টসাধ্য দায়িত্ব বহন ও কঠিন কাজসমূহ আঞ্জাম দেয়ার ক্ষেত্রে এক মহৌষধ।

(১০) এক মিনিটে আপনি (لاَ إِلَهَ إِلاَّ الله) (অর্থ- আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই) প্রায় ৫০ বার পড়তে পারেন। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য ও তাওহীদের বাণী। এটি কালিমায়ে তাইয়্যেবা (উত্তম বাণী) ও সুদৃঢ় বাক্য। যে ব্যক্তির শেষ কথা হবে এই বাক্য তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এছাড়াও এর ফজিলত ও মর্যাদার ব্যাপারে আরও অনেক বর্ণনা রয়েছে। 

(১১) এক মিনিটে আপনি (سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَى نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ) (আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমান, তাঁর সন্তুষ্টির সমান, তাঁর আরশের ওজনের সমান, তাঁর বাক্যমালার কালির সমান) এ দোয়াটি ১৫ বারের বেশি পড়তে পারেন। সাধারণ তাসবীহ ও যিকিরের চেয়ে এ বাক্যগুলো পাঠ করার সওয়াব অনেকগুণ বেশি যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  হতে সহীহ হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে।

(১২) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কাছে ১০০ বারের বেশি ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন তথা (أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ) পড়তে পারেন। এর ফজিলত আপনার অজানা নয়। এটি ক্ষমা প্রাপ্তি ও জান্নাতে প্রবেশের উপায়। এটি সুখময় জীবন, শক্তি বৃদ্ধি, বিপদ-আপদ রোধ, সকল কাজ সহজীকরণ, বৃষ্টি বর্ষণ, সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যম।

(১৩) এক মিনিটে আপনি সংক্ষেপে কিছু কথা বলতে পারেন যা দ্বারা আল্লাহ হয়ত এমন কোন কল্যাণের পথ খুলে দিবেন যা আপনি ভাবতেও পারেননি।

(১৪) এক মিনিটে আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ৫০ বার দরূদ পাঠ করতে পারেন। শুধু পড়বেন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এর প্রতিদানে আল্লাহ আপনার উপর ৫০০ বার সালাত (রহমত) পাঠাবেন। কারণ একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ ১০ বার এর প্রতিদান দেন।

(১৫) এক মিনিটে আপনার মন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, তাঁর ভালবাসা, তাঁর ভয়, তাঁর প্রতি আশা এবং তাঁর প্রেমে উদ্বেল হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে আপনি উবূদিয়্যাহ্‌ (আল্লাহর দাসত্ব) এর স্তরসমূহ অতিক্রম করতে পারেন; হতে পারে সে সময় আপনি হয়ত আপনার বিছানায় শুয়ে আছেন অথবা কোন পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছেন।

(১৬) এক মিনিটে আপনি সহজবোধ্য উপকারী কোনো বইয়ের দুই পৃষ্ঠার বেশি পড়তে পারেন।

(১৭) এক মিনিটের টেলিফোন যোগাযোগের মাধ্যমে আপনি সিলাতুর রাহেমবা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার আমল পালন করতে পারেন।

(১৮) এক মিনিটে আপনি দুই হাত তুলে ব্যাপক অর্থবোধক দোয়াগুলো হতে পছন্দমত যে কোন দোয়া করতে পারেন।

(১৯) এক মিনিটে আপনি কয়েকজন ব্যক্তিকে সালাম দিতে পারেন ও তাদের সাথে মুসাফাহা করতে পারেন।

(২০) এক মিনিটে আপনি কোন ব্যক্তিকে একটি মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে পারেন।   

(২১) এক মিনিটে আপনি একটি ভাল কাজের আদেশ করতে পারেন।

(২২) এক মিনিটে আপনি একজন ভাইকে নসিহত করতে পারেন।

(২৩) এক মিনিটে আপনি একজন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারেন।

(২৪) এক মিনিটে আপনি পথ থেকে ক্ষতিকর কোন বস্তু অপসারণ করতে পারেন। 

(২৫) এই এক মিনিটের সদ্ব্যবহার অবহেলায় কাটানো বাকি সময়গুলোর সদ্ব্যবহার করার অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করতে পারে।

ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: 
যখন ঘুমন্ত লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে তখন আমি আমার চোখের অশ্রু ফেলি এবং শ্রেষ্ঠ কবিতার একটি চরণ বারবার আওড়াতে থাকি।

কোন জ্ঞান অর্জন ছাড়া রাতগুলো কেটে যাবে এবং আমার জীবন থেকে হিসেব করা হবে- এটি কি সময়ের অপব্যয় নয়? ”

পরিশেষে জানুন আপনার ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও আল্লাহর নজরদারির অনুভূতির ভিত্তিতে আপনার প্রতিদান বাড়বে, আপনার নেকীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

জেনে রাখুন, এই আমলগুলোর বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না। এগুলোর জন্য আপনার পবিত্রতার প্রয়োজন নেই, ক্লান্তি বা কায়িক শ্রম নেই। বরং আপনি এ আমলগুলো করতে পারেন যখন আপনি পায়ে হেঁটে চলছেন অথবা গাড়িতে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন অথবা শুয়ে আছেন অথবা দাঁড়িয়ে আছেন অথবা বসে আছেন অথবা কারও জন্য অপেক্ষা করছেন।

একইভাবে এ আমলগুলো সুখী হওয়ার উপকরণ, আত্মপ্রশান্তির মাধ্যম, চিন্তা ও দুঃশ্চিন্তা দূর করার উপায়। আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দিন। আমাদের নবীর প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

মুফতী: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব