Pages

বিদআতের ভয়াবহতা এবং আমাদের সমাজের চিত্র


বিদআতের ভয়াবহতা এবং আমাদের সমাজের চিত্র


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

"যে ব্যক্তি এমন আমল করল যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তা পরিত্যাজ্য।" (সহীহ মুসলিম)
ভূমিকাঃ সুপ্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ, পৃথিবীর দ্বীতিয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত। তম্মধ্যে ধর্মীয় ক্ষেত্রে অন্যতম বড় সমস্যা হল বিদআত সমস্যা। বর্তমানে আমরা অজ্ঞতা বা বিভিন্ন কারণে ধর্মের নামে নানা ধরণের বিদআতী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছি। যার কারণে আমরা যেন ধীরে ধীরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ থেকে দূরে সরে পড়ছি। তাই মুসলিম ভাই-বোনদেরকে এ সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এতে আমি বিদআতের সংজ্ঞা, বিভক্তি, কি ভাবে বিদআত শুরু হয় এবং বিদআত করার কি ভয়াবহ পরিণতি ইত্যাদি যথাসম্ভব উদাহরণ দিয়ে প্রমাণ সহকারে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথের উপর অটুট থেকে জীবন পরিচালনা করার তওফীক দান করুন।
বিদআতের সংজ্ঞাঃ বিদআতের আবিধানিক অর্থ হল, নব আবিস্কৃত ও নব উদ্ভাবন। পারিভাষিক অর্থে দ্বীনের মধ্যে নতুন কোন কিছু সংযোজন করার নাম বিদআত।
ইমাম নওবী (রহঃ) বিদআত শব্দের অর্থ লিখেছেন, “(ছোওয়াবের আশায়) এমন সব কাজ করা বিদআত যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই।”
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) লিখেছেন, “শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত হল, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে ছিল না এমন নীতি ও পথ কে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে প্রবর্র্তন করা।”
অন্য ভাষায় বলতে গেলে, প্রত্যেক সে কাজকে বিদআত বলা হয় যা সোয়াব ও পূণ্যের নিয়তে করা হয় কিন্তু শরীয়তে তার কোন ভিত্তি বা প্রমাণ পাওয়া যায়না। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে করেননি এবং কাউকে তা করার অনুমতি ও প্রদান করেননি। এরূপ আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য হয় না। (বুখারী ও মুসলিম)
দ্বীনের সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকারক বিষয় হলো বিদআতঃ যেহেতু বিদআতকার্য পূণ্য ও ছাওয়াবের কাজ মনে করা হয় সেহেতু বিদআতী ব্যক্তি তা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারেনা। অথচ অন্যান্য পাপসমূহে বোধশক্তি থাকে। তাই আশা করা যায় যে, পাপী কোন না কোন দিন আপন পাপে লজ্জিত হয়ে নিশ্চয় তওবা-ইস্তেগফার করবে। এ জন্যই ছুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, “শয়তান পাপের পরিবর্তে বিদআতকেই খুবই ভালোবাসে।”
বিদআতী কাজ যেহেতু সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে করা হয় সেহেতু বিদআত থেকে তাওবা করার চিন্তা ও করা হয় না। তাই বিদআতীর মৌলিক আকীদা সংশোধন হওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা।
শরীয়তের দৃষ্টিতে দুটি পাপ এমন আছে যেগুলো না ছাড়া পর্যন্ত কোন আমল কবুল হয়না । পাপ দুটি হল, শিরক ও বিদআত।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ তাআলা বান্দার পাপ মাফ করতে থাকেন যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালার মাঝে পর্দা হয়। ছাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, পর্দা কী? তিনি বললেন, “পর্দা হলো, মানুষ শিরক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা।” (মুসনাদ আহমাদ)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ তায়ালা বিদআতীর তওবা গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ না বিদআত ছেড়ে দেয়।” (তাবারানী)
কিয়ামতের দিন যখন রাসূল আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাউযে কাওসারে আসবেন যাদেরকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উম্মত মনে করবেন কিন্তু ফেরেশ্তাগণ বলবেন, এরা হলো সে সকল ব্যক্তি যারা আপনার পরে বিদআত শরু করে দিয়েছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেন, “সুহকান, সুহকান” “দূর হয়ে যাও, দূর হয়ে যাও সে সকল লোক যারা আমার পরে দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ।” (বুখারী ও মুসলিম)
কিয়ামতের দিন কিছু লোক এমন হবে যারা আমল করে ক্লান্ত হয়ে গেছে কিন্তু জলন্ত আগুনে তাদেরকে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা গাশিয়া ৩-৪)

No comments:

Post a Comment