হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণনা বার্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেছেন, আমার বান্দা কোনো নেক কাজ করবে বলে যদি মনে মনে ভাবে তবে তা সম্পাদন করার পূর্বেই আমি তার জন্য একটি সওয়াব লিখে দিই। পরে যদি তা সম্পাদন করে; তবে তার দশগুণ সাওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে যদি কোনো অসৎ কাজ করবে বলে মনে মনে ভাবে, তবে তা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত মাফ করে দিই। কিন্তু তা সম্পাদন করলে তদনুরূপ একটি গুনাহ্ লিখি।
রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন, ফেরেশ্তাগণ আবেদন জানায় : হে প্রতিপালক! তোমার এই বান্দা, একটি পাপকর্মের ইচ্ছা করছে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তো তার সম্যক দ্রষ্টা। তিনি উত্তর করেন, অপেক্ষা কর, যদি সম্পাদন করে ফেলে, তবে সে অনুপাতে লিখবে, আর যদি তা পরিত্যাগ করে, তবে সে স্থলে একটি সওয়াব লিখে দিবে। কারণ আমার জন্যই সে তা পরিত্যাগ করেছে। রাসূলুল্লাহ [সা.] আরো বলেন, তোমাদের মধ্যে যে তার ইসলামে নিষ্ঠাবান হয়, তার কৃত প্রত্যেকটি নেককাজের বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লেখা হয়। পক্ষান্তরে তার কৃত প্রত্যেকটি বদকাজ তার সমান লেখা হয়। (মৃত্যুর মাধ্যমে) আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাত না হওয়া পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে। (মুসলিম:২০৫)
নেককাজের ইচ্ছাও ভালো। কোনো নেককাজের আন্তরিক ইচ্ছা করলেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে ছওয়াব দিবেন। যদিও এর উপর কোনো বাধা ছাড়াই আমল না করে থাকুক না কেন। আল্লাহ তা‘আলা এটি বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। নেককাজের আন্তরিক ইচ্ছার জন্য ছওয়াবের কারণ হলো, নেককাজের ইচ্ছাও উত্তম হয়ে থাকে। এটি ভালো কাজের জন্য পথপ্রদর্শক। আর সৎকাজের ইচ্ছা দৈহিক আমল না হলেও অন্তরের একটি আমল বটে। প্রশ্ন হতে পারে যে, যদি অন্তরের আমল ছওয়াব দানের ক্ষেত্রে সমাদৃত হয়, তাহলে এর বিপরীত অবস্থায় গুনাহকারীকে তিরস্কার কেন করা হবে না? এর উত্তর সহজ। খারাপ কাজের কল্পনার পর তদনুযায়ী বাস্তবে কাজ পরিহার করার কারণে অন্তরে কুকল্পনার কাফ্ফারা হয়ে গেছে। কারণ সে খারাপ ইচ্ছা ও কল্পনা বর্জন করেছে, খাহেশাতে নফসানীর বিরোধিতা করেছে। আল্লামা খাত্তাবী রহ.-এর মতে, গুনাহ বর্জনের ফলে তখনই নেকি লেখা হয় যখন গুনাহ বর্জনের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা ত্যাগ করে। আসলে সে-ই প্রকৃত অর্থে গুনাহ বর্জনকারী। যেমন- কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যভিচার করার ইচ্ছা করল, কিন্তু তাকে একাকী পেয়েও আল্লাহর ভয়ে এ কাজ থেকে বিরত রইল। তবে তার জন্য ছওয়াব লিখা হবে। কিন্তু যদি ব্যভিচারের কল্পনা ও বাস্তবায়নের মাঝে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে সে তা করতে না পারে, তবে ছওয়াব লিখা হবে না।
No comments:
Post a Comment