Pages

যাদু ও বদনযর- চিকিৎসা

যাদু ও বদনযর- চিকিৎসা
মূলঃ ফাহাদ বিন সুলাইমান আল্ কাজী, অনুবাদঃ মুহাঃ আবদুল্লাহ্ আল্ কাফী, দাঈ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সঊদী আরব। السحر والعين والرقية منهما
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রশংসা মাত্রই আল্লাহ্ তায়ালার তায়ালা জন্য। দরূদ ও সালাম তার রাসূল মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি নাযিল হোক। অত:পর আল্লাহ্ তায়ালা বিশেষ হিকমতে মানুষকে সৃষ্টি করে তার জন্য নানারকম বিপদাপদ, বালা-মুছিবত নাযিল করেছেন, যাতে করে তার মাধ্যমে মুমিনদের পাপের প্রায়াশ্চিত্য হয়, তাদের মর্যদা উন্নীত হয়, আর কাফেরদেরকে শাস্তি দেয়া যায়।
কিছু কিছু মানুষ যে সকল বালা-মুছিবতে আক্রান্ত হয় তম্মধ্যে, যাদু এবং বদনযর অন্যতম। এদুটির অস্তিত্ব শরীয়ত এবং অনুভবের মাধ্যমে প্রমাণিত। বিশেষ করে ইদানিংকালে এদুটি বালা মানুষ সমাজে অধিকহারে প্রসার লাভ করেছে। কিন্তু কেন? কি-ই বা তার চিকিৎসা? মুসলিম ব্যক্তি যদি আল্লাহ্র কুরআন নিয়ে গবেষণা করে তবেই বুঝতে পারবে এর কারণ কি, আর তা থেকে মুক্তির পথই বা কি? দুটি
আসুন! আমরা সমাধান নেই মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে। আল্লাহ্র কালামে আছে সমস্ত রোগের পূর্ণ আরোগ্য। আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন,
وَنُنَزِّلُ مِنْ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ
আর আমি কুরআনে এমন কিছু নাযিল করেছি যা হচ্ছে আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য রহমত। (সূরা বানী ইসরাঈল- ৮২)
তিনি আরো বলেন,
وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِي
আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন শুধু তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন। (সূরা শুআরা- ৮০)
যাদু, বদনযর প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ সমূহঃ
১) পাপচারে লিপ্ত থাকাঃ আল্লাহ্ বলেনঃ
وَماَ أصاَبَكُمْ مِنْ مُصِيْبَةٍ فَبِماَ كَسَبَتْ أيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوا عَنْ كَثِيْرٍ
তোমাদেরকে যে মুসিবতেই স্পর্শ করুক না কেন তা তোমাদের কৃতকর্মের কারণেই হয়ে থাকে। আর তিনি অনেক কিছুই ক্ষমা করেন। (শূরা- ৩০) সুতরাং এসকল মুছিবতের প্রধান কারণ হল আমাদের পাপকর্ম।
২) তাওহীদ সম্পর্কে অজ্ঞতাঃ আল্লাহ্ আমাদের স্রষ্টা, আসমান-যমীনের স্রষ্টা, হায়াত-মওতের মালিক, রিযিক দাতা, তিনি ছাড়া কোন রব নেই… ইত্যাদি বিশ্বাসকেই অনেকে আল্লাহ্র তাওহীদ মনে করে। অথচ তারাই অনায়াসে অন্যান্য শির্কে লিপ্ত হয়। যেমনঃ গারুল্লাহর নামে নযর মানত, মাজারে মাজারে ধর্ণা দেয়া, মৃত পীরের নৈকট্যের জন্য মাজারে গরু-ছাগল-মহিষ যবাই, পীর ওলীদেরকে ওয়াসীলা হিসেবে গ্রহণ করা, তাদের থেকে কল্যাণ-অকল্যাণের ধারণা রাখা, গাইরুল্লাহকে আল্লাহর মত ভালবাসা … ইত্যাদি।
আবার অনেকে বিভিন্ন গণক-জ্যোতির্বিদের কাছে গমণ করে, বিভিন্ন পাথরে, রিং, বালা, সুতায় বিশ্বাস রাখে, হস্তরেখাবিদের কাছে যায়, তাবীজ-কবচ ব্যবহার করে… এগুলোও ঈমান নষ্টকারী কাজ।
৩) ওয়াজিব কাজ পরিত্যাগ ও হারাম কাজে লিপ্ত থাকাঃ বিশেষ করে ছালাতের ব্যাপারে শিথীলতা প্রদর্শন যা এখন মুসলমানদের মধ্যে খুবই সাধারণ বিষয়। এমনিভাবে নির্ধারিত অন্যান্য ফরযের ক্ষেত্রে শিথীলতা এবং ইসলাম নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হওয়াও এধরণের বালা-মুছিবতে পতিত হওয়ার অন্যতম কারণ।
৪) আল্লাহর যিকির থেকে উদাসীন থাকাঃ আল্লাহ্ বলেনঃ
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطاَناً فَهُوَ لَهُ قَرِيْنٌ
“যে ব্যক্তি রহমান তথা আল্লাহর যিকির থেকে বিমুখ থাকে তার জন্য আমি একজন শয়তান নির্ধারণ করে দেই, তখন সেই হয় তার সঙ্গী।” (যুখরুফ-৩৬) বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর যিকির থেকে গাফেল থাকে- ছালাতে পাবন্দি নেই, কুরআনের সাথে সম্পর্ক নেই, সকাল-সন্ধার যিকির থেকে উদাসীন, তাদের গৃহ খেল-তামাশার সরঞ্জামে (গান-বাদ্য, সিনেমা, উলঙ্গ-অর্ধালঙ্গ নারীর ছবি ইত্যাদিতে) পরিপূর্ণ।
অধিকাংশ সময় বাজে কাজ ও অধর্মের কাজে লিপ্ত থাকে। খানা-পিনা, নিদ্রা, স্ত্রী সহবাস, বাড়ীতে প্রবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখতা…প্রভৃতি কারণে তাদের গৃহে শয়তানের উপস্থিতি খুব সহজেই হয়ে থাকে। এমনিভাবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলে দুর্বলতা। যেমন অনেকে রোগ হলে আল্লাহর চাইতে ডাক্তার বা ঔষধের উপর বেশী ভরসা রাখে।
যাদুর বিধানঃ
যাদু একটি হারাম কাজ। যা সুষ্পষ্ট কুফুরী। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
“তারা উভয়ই (হারূত মারূত ফেরেস্তা) যখনই কাউকে যাদু শিক্ষা দিতেন তখনই বলতেন, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই যাদু শিখে তুমি কাফের হয়ো না। অত:পর তারা তাদের কাছ থেকে এমন যাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতো।” (সূরা বাক্বারা- ১০২)
জ্যোতিষী ও গণকদের নিকট যাওয়ার বিধানঃ
মান্যবর শাইখ ইবনু বায (রহঃ) বলেন, ইলমে গায়েবের দাবীদার কোন গণক বা জ্যোতিষের কাছে রোগ বা তার ধরণ সম্পর্কে জানার জন্য গমণ করা কোন রুগীর জন্য জায়েয নয়। এমনিভাবে তারা কিছু বললে তা বিশ্বাস করাও জায়েয নয়। কেননা তারা ধারণা করে গায়েবের কথা বলে অথবা জ্বিনের সাহায্যে এরূপ করে থাকে। আর এর মাধ্যমে এরা সুষ্পষ্ট কুফুরীতে লিপ্ত হয়। কেননা নবী (ছাঃ) বলেন,
“যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট গিয়ে কোন কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার ৪০ দিনের ছালাত কবূল হবে না।” (ছহীহ মুসলিম)
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতিষের নিকট গমণ করে তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে সে মুহাম্মাদ (ছাঃ)এর উপর নাযিলকৃত বিধানের সাথে কুফুরী করবে।” (আবূ দাঊদ)
ঈমরান বিন হুছাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন,
“যে ব্যক্তি পাখি উড়িয়ে ভাগ্য গণনা করে বা যার জন্য পাখি উড়ানো হয়, যে জ্যোতির্বিদ্যার কাজ করে এবং যার জন্য করা হয়, যে যাদু করে এবং যার জন্য করা হয় এরা সবাই আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষীর নিকট গিয়ে তাকে সত্যায়ন করবে সে মুহাম্মাদের উপর নাযিলকৃত বিধানের সাথে কুফুরী করবে।” (বাযযার উত্তম সনদে)
এ হাদীছগুলো প্রমাণ করছে যে যাদুকর এবং জ্যোতিষ কাফের। কেননা তারা ইলমে গায়বের দাবীদার। আর তা কুফুরী। এমনিভাবে যারা হাতের রেখা দেখে বা টিয়া পাখির মাধ্যমে ভাগ্য গণনা করে, চোর ধরার জন্য বা রোগ নির্ণয় করার জন্য আয়না পড়ে বা চাউল-রুটি পড়ে বা বাটি ঘুরায় বা হাত চালায় তারাও এ হাদীছের অন্তর্ভূক্ত হবে।
কিভাবে যাদু এবং বদনযর থেকে বেঁচে থাকবে?
১) আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলঃ সকল প্রকার বালা-মুছিবত থেকে বেঁচে থাকা এবং যাবতীয় উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল আল্লাহর প্রতি ভরসা। আল্লাহ্ বলেন,
(وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلىَ اللهِ فَهُوَ حَسْبُهُ)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবে।” (সূরা ত্বালাক- ৩)
২) আল্লাহর নির্দেশের বাস্তবায়ন ও নিষেধ থেকে দূরে থাকাঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ নিষেধের হেফাযত করবে, সে অনুযায়ী চলবে আল্লাহ্ তাকে দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার, সম্পদ সর্বদিক থেকে হেফাযত করবেন। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন,“তুমি আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চল আল্লাহ্ তোমাকে হেফাযত করবেন।” (তিরমিযী)
৩) অধিকহারে আল্লাহর যিকির করাঃ যেমন- কুরআন তেলাওয়াত, সুবহানাল্লাহ্, আল হামদুলিল্লাহ্, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি বেশী বেশী বলা, অধিকহারে ইস্তেগফার করা, নবী (ছাঃ)এর উপর বেশী করে দরূদ পাঠ… ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে বান্দা নিজেকে সুরক্ষিত করতে পারে।
নির্দিষ্টভাবে যে সকল দু’আ কালামের মাধ্যমে যাদু, বান, টোনা, বদ নযর, জ্বিন, শয়তান ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিম্নরূপঃ
ক) নিদ্রা যাওয়ার আগে আয়াতাল কুরসী (সূরা বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত) পাঠ করা। যে ব্যক্তি রাতে তা পাঠ করে, তার জন্য সকাল পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাযতকারী ফেরেশতা নিয়োগ থাকে, ফলে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে পারে না। (ছহীহ বুখারী)
খ) সূরা বাক্বারা পাঠ করা। যে গৃহে এই সূরা পাঠ করা হয় সেখান থেকে শয়তান পলায়ন করে। (মুসলিম)
গ) সূরা বাক্বারার শেষের দু’আয়াত পাঠ করা। যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষের দুটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য এ দুটিই যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ- সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। (ছহীহ বুখারী)
ঘ) সকাল-সন্ধার নির্ধারিত দু’আ সমূহ পাঠ করা। গৃহে প্রবেশ, গৃহ থেকে বের হওয়া, সোওয়ারীতে আরোহণ করা প্রভৃতি সময়ে নির্দিষ্ট দু’আ পাঠ করা।
ঙ) শিশুদেরকে ঝাড়-ফুঁক করা। যেমন রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)কে ঝাড়-ফুঁক করতেন। তিনি বলতেন,
أُعِيْذُكُماَ بِكَلِماَتِ اللهِ التاَّمَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطاَنٍ وَهاَمَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
“আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে আমি তোমাদের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করছি সকল প্রকার শয়তান থেকে, বিষধর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে এবং সকল প্রকার বদ নযর থেকে।” (বুখারী)
চ) সূর্যাস্তের সময় শিশুদেরকে বাড়ীর বাইরে যেতে বাধা দেয়া। নবী (ছাঃ) বলেন, “যখন সন্ধা হয় তখন তোমাদের শিশুদেরকে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত রাখ। কেননা এই সময়ে শয়তানের দল বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। যখন রাতের একটি প্রহর অতিবাহিত হবে তখন (শিশুদেরকে) ছেড়ে দিতে বাধা নেই।” (বুখারী ও মুসলিম)
ছ) বাসস্থানকে ক্রুশ, মূর্তি, প্রাণীর ছবি, কুকুর থেকে পবিত্র করা। কেননা এসব বস্তু যে গৃহে থাকে সেখানে ফেরেস্তা প্রবেশ করে না। এমনিভাবে গান-বাদ্যের সরঞ্জাম থেকেও গৃহকে পবিত্র রাখা।
চিকিৎসাঃ
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়েম বলেন, যাদু-টোনা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী চিকিৎসা হল এলাহী চিকিৎসা। বরং প্রকৃতপক্ষে তাই হল, আসল উপকারী চিকিৎসা। তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:-
যাদুকৃত ব্যক্তির চিকিৎসা:
১) প্রথম পন্থ : যে সমস্ত বস্তু দ্বারা যাদু করা হয়েছে তা সম্ভব হলে বের করা এবং নষ্ট করে ফেলা।
২) দ্বিতীয় পন্থা হচ্ছে: শরীয়ত সম্মত ঝাড়-ফুঁক। মহামান্য শায়খ ইবনু বায (র:) বলেন, যাদু থেকে মুক্তির জন্য নিম্ন লিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়: সাতটি কাঁচা কুল (বরই) পাতা নিয়ে বেটে একটি পাত্রে রাখবে এবং তাতে পানি মিশ্রিত করবে। পানি এমন পরিমাণ হওয়া চাই যা দ্বারা গোসল করা সম্ভব হয়। এরপর উক্ত পানিতে কুরআনের এ আয়াতগুলো পড়ে ফুঁক দিবে: আয়াতাল কুরসী, সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সূরা নাস, সূরা আরাফের (১১৭ থেকে ১২২) নং আয়াত, সূরা ইউনুসের (৭৯ থেকে ৮২) নং আয়াত এবং সূরা ত্বায়াহার (৬৫ থেকে ৭০) নং আয়াত। তারপর উক্ত পানি থেকে কিছু পানি রুগীকে পান করাবে এবং অবশিষ্ট দ্বারা তাকে গোসল করাবে। ইনশাআল্লাহ্ এদ্বারা যাদু কেটে যাবে।
যদি প্রয়োজন দেখা দেয় তবে উক্ত পদ্ধতী দু’বার বা ততোধিক ব্যবহার করতে পারে। (বহুবার এপদ্ধতী পরীক্ষা করা হয়েছে এবং আল্লাহ্ তা দ্বারা উপকার দান করেছেন।)
যাদু সহ সকল প্রকার বালা-মুছিবতের সবচেয়ে উপকারী চিকিৎসা হল, খাঁটিভাবে আল্লাহ্র কাছে তওবা ও বেশী বেশী ইস্তেগফার করা। কেননা পাপাচারই হল সকল মুছিবতের প্রধান কারণ। আর তওবাই হল তার প্রধান ঔষধ।
বদ নযরের চিকিৎসা:
প্রথমত: কোন ব্যক্তির নযর লেগেছে তা যদি জানা যায়, তবে তাকে ওযু করতে বলতে হবে। অতঃপর উক্ত ওযুর পানি দ্বারা বদনযরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে গোসল করাতে হবে। (ছহীহ মুসলিম)
দ্বিতীয়ত: যদি তাকে জানা না যায়, তবে নিম্নলিখিত আয়াত ও দু’আ সমূহ পড়ে বদনযরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঝাড়-ফুঁক করবে:
ক) সূরা ফাতিহা,
খ) আয়াতুল কুরসী (সূরা বাক্বারার ২৫৫নং আয়াত)
গ) সূরা বাক্বারার শেষের দুটি আয়াত (২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত),
ঘ) সূরা ইখলাছ,
ঙ) সূরা ফালাক,
চ) সূরা নাস,
ছ) এই দু’আটি
بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ وَمِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أوْ عَيْنٍ حاَسِدٍ اللهُ يَشْفِيْكَ بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ
“আমি আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাকে ঝাড়-ফুঁক করছি- তোমাকে কষ্টদানকারী সকল বস্তু হতে, এবং প্রত্যেক ব্যক্তির অথবা হিংসুক ব্যক্তির নযরের অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ্ তোমাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাকে ঝাড়-ফুঁক করছি।” (বুখারী ও মুসলিম)
জ) এই দু’আটি
أعُوذُ بِكَلِماَتِ اللهِ التاَّمَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطاَنٍ وَهاَمَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
“আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি সকল প্রকার শয়তান থেকে, বিষধর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে এবং সকল প্রকার বদনযর থেকে।” (বুখারী)
ঝ) এই দু’আটি
بِسْمِ اللهِ يُبْرِيْكَ ومِنْ كُلِّ داَءٍ يَشْفِيْكَ، ومِنْ شَرِّ حاِسِدٍ إذاَ حَسَدَ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ ذِيْ عَيْنٍ
“আল্লাহর নামে শুরু করছি, তিনি তোমাকে মুক্ত করুন, প্রত্যেক অসুখ থেকে আরোগ্য দান করুন, প্রত্যেক হিংসুকের হিংসা থেকে এবং প্রত্যেক বদনযরের অনিষ্ট থেকে (মুক্ত করুন)। (মুসলিম)
জিনে ধরার চিকিৎসা:
ক) সূরা ফাতিহা, খ) আয়াতাল কুরসী, গ) সূরা বাক্বারার শেষের দুটি আয়াত, ঘ) সূরা ইখলাছ, ঙ) সূরা ফালাক, চ) সূরা নাস ইত্যাদি পাঠ করে জিনে ধরা ব্যক্তিকে ফুঁ দিবে। এরূপ তিনবার বা ততোধিকবার করবে।
ওয়াস্ওয়াসা বা কুমন্ত্রনার চিকিৎসা:
১) আঊযুবিল্লাহ্… পাঠের মাধ্যমে শয়তান এবং তার কুমন্ত্রনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। ২) সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করবে। ৩) আল্লাহ্ তায়ালার যিকির করবে। কেননা তা হচ্ছে ওয়াস্ওয়াসা দুর করার সর্বাধিক উপকারী চিকিৎসা। ৪) মনের কুচিন্তা বা ওয়াস্ওয়াসার দিকে দৃষ্টিপাত না করে তার প্রতি কোন গুরুত্ব দিবে না। মনে যে সমস্ত কুচিন্তা বা ওয়াস্ওয়াসার উদ্রেক হয় সে সম্পর্কে মুসলিম ব্যক্তি জিজ্ঞাসিত হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মানুষের অন্তরে যে সমস্ত কুচিন্তা জাগ্রত হয় আল্লাহ্ তা আমার উম্মত থেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষন তারা তা মুখে উচ্চারণ না করবে বা কর্মে বাস্তবায়ন না করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
জখম বা ফোঁড়ার চিকিৎসা:
ইমাম নবুবী বলেন, তর্জনী আঙ্গুলে থুথু লাগাবে তারপর তা দ্বারা মাটি স্পর্শ করবে এবং সেই মাটি জখম বা ফোঁড়ার স্থানে লাগাবে ও সে সময় এই দু’আ পাঠ করবে:
بِسْمِ الله، تُرْبَةُ أرْضِناَ بِرِيْقَةِ بَعْضِناَ، يُشْفَى سَقِيْمُناَ بإذْنِ رَبِّناَ
“আল্লাহর নামে, আমাদের যমীনের কিছু মাটি, আমাদের একজনের থুথুর দ্বারা আমাদের রবের অনুমতিতে আমাদের রুগীর আরোগ্য হবে।” (বুখারী)
* বিষধর প্রাণী বা সাপে কাটলে চিকিৎসা: বারবার সূরা ফাতিহা পড়ে রুগীকে ঝাড়-ফুঁক করবে। আরবের জনৈক ব্যক্তিকে সাপে কাটলে ছাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) সূরা ফাতিহা দ্বারা তার চিকিৎসা করেছিলেন এবং নবী তা সমর্থন করেছিলেন। (বুখারী)
জ্বরের চিকিৎসা:
রুগীর মাথায় পানি ঢালবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। একে তোমরা পানি দ্বারা ঠান্ডা কর।” (বুখারী)
ব্যাথা-বেদনার চিকিৎসা:
শরীরের যে স্থানে ব্যাথা অনুভূত হয় সেখানে হাত রেখে তিনবার “বিসমিল্লাহ্” বলবেন। তারপর এই দু‘আ পড়বেন সাতবার:
أعُوْذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ ماَ أجِدُ وَاُحاَذِرُ
“আল্লাহর ইজ্জত ও ক্ষমতার উসীলায় যে ব্যাথা আমি অনুভব করছি এবং যা ভয় করছি তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (মুসলিম)
বিপদ এবং দুঃশ্চিন্তা দূর করার উপায়:
১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও দুঃশ্চিন্তা বা পেরেশানী বা বিপদ অনুভব করলে এ দু‘আ পাঠ করতেন:
لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
১) ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযীমুল হালীমু লাইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আযীম, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস্ সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরযি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারীম।’ (বুখারী)
لا إِلَهَ إِلّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
২) ‘লাইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায্যালেমীন। (তিরমিযী)
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
৩) আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল্ হাম্মি ওয়াল্ হুযনি ওয়া আঊযুবিকা মিনাল জুবনী ওয়াল বুখ্লি ওয়া আঊযুবিকা মিন গালাবাতিদ্ দায়নি ওয়া কাহর্রি রিজাল। (বুখারী)
সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিলে:
এই আয়াতগুলো পাঠ করে মহিলার উপর ফুঁক দিবে: ১) সূরা রা‘দের ৮নং আয়াত ২) সূরা ফাতির ১১ নং আয়াত ৩) সূরা নাহাল ৮৭নং আয়াত এবং ৪) সূরা যিলযাল।
শায়খ ইবনু ঊছাইমীন (রহ:) বলেন, ‘গর্ভবতীর সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে কষ্টের সময় এসমস্ত আয়াত পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ্ অনেকের উপকার দান করেছেন। একজন মহিলা এআয়াতগুলো পাঠ করে সন্তান প্রসবীনীর উপর ফুঁক দিবে। অথবা যে কোন লোক তা পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিবে। তারপর সে পানি গর্ভবতীকে পান করাবে এবং তা দিয়ে তার পেট মালিশ করবে।’
যে কোন রোগের চিকিৎসায়:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন ব্যক্তি যদি এমন রুগীকে দেখতে যায়, যার মৃত্যু সমাগত হয়নি; তারপর তার নিকট নিম্ন লিখিত দু’আটি পাঠ করে, তবে আল্লাহ্ তাকে আরোগ্য দান করবেন। দু’আটি এই:
(أسْألُ اللهَ الْعَظيْمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ أنْ يَشْفِيَكَ)
“আমি সুমহান আল্লাহর কাছে- সুবিশাল আরশের প্রভুর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি আপনাকে আরোগ্য দান করুন। (আবু দাঊদ ও তিরমিযী, হাদীছটির সনদ উত্তম)
মধু দ্বারা চিকিৎসা:
আল্লাহ্ তায়ালা মধুর উপকারীতা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন,
يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
“মৌমাছির পেট থেকে বিভিন্ন রঙের সুস্বাদু পানীয় বের হয়। এতে রয়েছে মানুষের জন্য আরোগ্য। নিশ্চয় এর মধ্যে রয়েছে চিন্তাশীল জাতির জন্য নির্দশন।” (সূরা নাহাল- ৬৯)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিনটি বস্তুর মধ্যে আরোগ্য রয়েছে: ১) মধু পানে ২) শিঙ্গা লাগানোতে এবং ৩) লোহা পুড়িয়ে তা দিয়ে দাগ লাগানো দ্বারা। তবে আমার উম্মতকে দাগ লাগাতে নিষেধ করছি। (বুখারী ও মুসলিম)
যমযম পানি দ্বারা চিকিৎসা:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু যর (রা:)কে বলেন, যখন কিনা তিনি যমযম পানি ছাড়া অন্য কোন খাদ্য পাননি: “নিশ্চয় এ পানি খাদ্য হিসেবে উপযুক্ত খাদ্য।” তিনি আরো বলেন, “যে উদ্দেশ্যে যমযম পানি পান করা হয় তা পূরণ হয়।” (সুনান ইবনু মাজাহ্)
কালো জিরা দ্বারা চিকিৎসা:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা অবশ্যই এই কালো জিরা ব্যবহার করবে; কেননা মৃত্যু ছাড়া এতে সকল রোগের ঔষধ রয়েছে।” (বুখারী)
শরীয়ত সম্মত ঝাড়-ফুঁক এবং জ্যোতির্বিদ্যা, যাদু ও গণনা ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য করার উপায়ঃ
যে ব্যক্তি জ্যোতির্বিদ্যা, যাদু ও গণনা ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করে তার পরিচয় হল,
১) সে রুগী এবং তার বাবা-মার নাম জিজ্ঞেস করবে।
২) রুগীর কোন বস্তু যেমন: টুপি বা কাপড় বা চুল ইত্যাদি তলব করবে।
৩) নির্দিষ্ট কোন বৈশিষ্টে প্রাণী যবেহ করার কথা বলবে। বা মোমবাতি, আগরবাতী ইত্যাদি দান করার জন্য বলবে।
৪) তাবিজ-কবচ যেমন: নম্বরের মাধ্যমে বা বিচ্ছন্ন অক্ষরের মাধ্যমে ছক আঁকিয়ে প্রদান করবে।
৫) ঝাড়-ফুঁক করার সময় দুর্বোধ্য শব্দে গুণগুন করে মন্ত্র পাঠ করবে।
৬) রুগীকে এমন কিছু প্রদান করবে যা যমীনে বা কবরস্থানে বা নিজ গৃহে পুঁতে রাখতে বলবে।
৭) রুগীকে তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে (অতিত, ভবিষ্যত) সম্পর্কে কিছু খবর প্রদান করবে।
৮) কিছু সুষ্পষ্ট পাপাচার তার মধ্যে দেখা যাবে। যেমন: দাড়ি মুন্ডন, মোচ লম্বা, টাখনুর নীচে কাপড়, জামাআতের সাথে ছালাত আদায়ে উদাসীনতা…. প্রভৃতি।
উল্লেখ্য যে, বালা মুছিবত থেকে রক্ষার জন্য বা রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভের জন্য সব ধরণের তাবীজ-কবচ ব্যবহার করা শির্কের অন্তর্ভূক্ত। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন:
مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ
“যে ব্যক্তি তাবিজ লটকাবে সে শির্ক করবে।” (ছহীহ্ সনদে আহমাদ, হাকেম প্রভৃতি)
তাবীজ-কবচের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই লিঙ্কটি ফলো করুনঃ
http://www.islamhouse.com/
আল্লাহ্ সবাইকে সকল প্রকার যাদু-টোনা, বদনযর প্রভৃতি থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। আর সব ধরণের শির্ক ও তার উপকরণ থেকে দূরে থাকার তাওফীক দিন। আমীন॥

কুরআন মুখস্থ করার প্ল্যানঃ


কুরআনের এই অংশগগুলো মুখস্থ রাখা ভালো, বিভিন্ন আমল করার জন্য উপকারী হবে -
১. সুরা যিলযাল থেকে সুরা নাস পর্যন্ত 
[এটা ইমাম ইবনে বাজ রাহিমাহুল্লাহ সবাইকে রেকমেন্ড করেছেন, অন্তত এই সুরাগুলো মুখস্থ রেখে এর তর্জমা ও তাফসীর জানার জন্য]
২. আয়াতুল কুরসী
[সুরা বাক্বারার ২৫৫ নাম্বার আয়াত]
৩. সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত
[ঘুমানোর পূর্বে এই দুই আয়াত পাঠ করা সুন্নত]
৪. সুরা আল-আ'লা, আমপারার ৮৭ নাম্বার সুরা।
[বিতির নামায ৩ রাকাত পড়লে তার ১ম রাকাতে সুরা আলা, ২য় রাকাতে সুরা কাফিরুন ও ৩য় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়া সুন্নত]
৫. সুরা মুলক
[প্রতিদিন পাঠ করা সুন্নত, কবরের আযাব, জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাচানোর জন্য সুপারিশ করবে]
৬. সুরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত [কতগুলো আসমাউল হুসনা মুখস্থ থাকবে]
৭.সুরা কাহফের ১ম দশ আয়াত মুখস্থ করলে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপস থাকবে।
.
.
.
এইভাবে যত বেশি ক্বুরানের আয়াত মুখস্থ রাখা যায় ততই উত্তম। তবে আমপারার সুরাগুলো ছোট, সহজ আস্তে আস্তে এইগুলো মুখস্থ করার অভ্যাস করা যেতে পারে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তোওফিক দান করুন।

ঈমানদার বান্দা ও বান্দীদের জন্য শয়তানদের কিছু ধোকার নমুনাঃ

১. দুনিয়াটা মস্ত বড়, খাও দাও ফূর্তি করো।
২. তরুণ বয়স আর ফিরে আসবেনা, লাইফটাকে এখনই এনজয়(!) করে নাও। 
৩. বিয়ের আগ পর্যন্ত যিনা-ব্যভিচার নষ্টামি বাদরামি করো। ভালো দেখে একটা বিয়ে করে, বিয়ের পরে তোওবা করে নিলেই হবে। 
৪. ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়ে হজ্জ করতে যাবো। 
৫. হজ্জ করে হারাম ইনকাম ছেড়ে দেবো।
৬. এখন হজ্জ করে ফেললে নষ্টামি, বাদরামি আর করা যাবেনা। তাই ম্রার আগে বুড়া বয়সে যখন পাপ করার মতো আর শক্তি থাকবেনা, তখন তোওবা করে হজ্জ করবো।
৭. ভাইয়া আমার বয়স অল্প, আর আজকালকার মেয়েরা খোলামেলা ড্রেস পড়ে। তাই দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রন রাখতে পারিনা।
৮. দাড়ি রাখলে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করা যাবেনা, বিয়ে করে বউয়ের পারমিশান(!) নিয়ে দাড়ি রাখতে হবে।
৯. নামাযী বয়ফ্রেন্ড, হিজাবী গার্লফ্রেন্ড।
১০. এনার্জি ড্রিংক (আসলে মদের জুস)।
১১. ইসলামী(!) নাশিদ, ড্যান্স। (ধোকা)
১২. হিজাব (শুধুমাত্র মাথায় স্কার্ফ)
১৩. ফ্যাশান হাউজ, বিউটি কনটেস্ট (পতিতা নারীদের অনুকরণ করে তাদের মতো ইজ্জত বিক্রি করে দেওয়ার ট্রেনিং)
১৪. ইসলামী(!) গণতন্ত্র
১৫. বড় হুজুর বা পীর সাপ (বিদাতী, পথভ্রষ্ট বক্তা বা আলেম)
১৬. অনলাইন মুজাহিদ (গালি দেওয়ার উপরে ডিগ্রীপ্রাপ্ত)
১৭. সম্মানিত এডমিন (অল্পবয়ষ্ক মনগড়া ফতুয়াবাজ)
১৮. কিতাবের তালিম হবে (মুসলমানদের কাছে কিতাব মানে ক্বুরান। তাদের কাছে কিতাব মানে ভেজাল আমল)
১৯. বহুত ফায়দা (জাল জয়ীফ হাদীস দিয়ে মিথ্যা ফযীলতের ধোকা)
২০. ইসলাম প্রতিষ্ঠা (ইসলাম কি না জেনেই ভ্রান্ত দল বা সংগঠনে ঝাপিয়ে পড়া, চোখ বন্ধ করে তাদের কুকীর্তির সাফাই গাওয়া)
২১. আত্মশুদ্ধি, তাসাওফ, মারেফত (শিরক বেদাত শিক্ষা দিয়ে ঈমান নষ্ট করা)
২২. মাযার যিয়ারত (মাযারে সিজদা দেওয়া, মরা মানুষকে দেবতা হিসেবে নেওয়া)
২৩. তাবিজ, তদবীর (ক্বুরানের আয়াত বিক্রি করে খাওয়া।
২৪. নারী মুক্তি, সমান অধিকার, নারীদের ক্ষমতায়ন (আসলে মেয়েদেরকে পুরুষদের জন্য সহজলভ্য করার টেকনিক)
২৫. মুক্তমনা, ধর্ম নিরপেক্ষ, সুশীল বুদ্ধিজীবী (আসলে ইসলামের দুশমন, নাস্তিক)

 Courtesy

“শয়তান এর চক্রান্ত ও বাঁচার ১০টি উপায়”

“শয়তান এর  চক্রান্ত ও বাঁচার ১০টি উপায়”

শয়তান ৬ ভাবে আমাদের অনিষ্ট করার চেষ্টা করে; এই চেষ্টায় সে ততক্ষণ পর্যন্ত লেগে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষকে এর কোন একটি বা একের অধিক ক্ষতিতে ফেলতে পারেঃ
১. শিরক এবং অবিশ্বাস বা কুফরের মধ্যে ফেলা;
২. তারপর বিদাআতে জড়িয়ে ফেলা;
৩. অতঃপর বড় গুনাহে প্রলুব্ধ করা;
৪. তারপর ছোট গুনাহে লিপ্ত করানো;
৫. এরপর নেক আমলের পরিবর্তে ‘মুবাহ’ আমলে ব্যস্ত রাখা; (যে কাজে গুনাহ বা সওয়াব কোনটিই হয় না এমন কাজকে মুবাহ বলে, যেমন খাওয়া, ঘুম ইত্যাদি);
উপরের কোন উপায়েই যদি অনিষ্ট না করতে পারে তাহলে
৬. অবশেষে অধিক সওয়াবের আমলের পরিবর্তে তুলামূলক কম সওয়াবের আমলে ব্যস্ত রাখা।


শয়তান থেকে আত্মরক্ষার ১০টি উপায়ঃ

১. আল্লাহর কাছে শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাওয়া;
২. সুরা ফালাক ও সুরা নাস তেলাওয়াত করা;
৩. আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা;
৪. সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা;
৫. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করা;
৬. সুরা গাফির এর প্রথম তিন আয়াত তেলাওয়াত করা;
৭. “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু, লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইইন কাদীর” একশত বার পড়া যার অর্থ – “আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তারই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর, তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
৮. অধিক হারে আল্লাহর জিকির করা;
৯. উত্তমরূপে ওজু করা এবং সালাত আদায় করা;
১০. অনর্থক এদিক সেদিক খেয়াল করা, অসার কথা বলা, অতিরিক্ত খাওয়া ও অহেতুক লোকজনের সাথে মেলামেশা থেকে নিজেকে বিরত রাখা।

উৎসঃ ইমাম ইবনুল কায়্যিম আল-জাওজিয়া (রহঃ) কর্তৃক লিখিত ;বাদা-ই আল ফাওয়া-ইদ তারীক আল ওয়াসুল ইলা আল ইলম আল মাউল’ (পৃষ্ঠা ১২৯) থেকে শায়খ আব্দুর রাহমান ইবনে নাসির আস সাদী (রহঃ) এর সংকলনকৃত।

দাজ্জাল সম্পর্কে জানুন


দাজ্জাল সম্পর্কে জানুনঃ
. দাজ্জাল কে?
. দাজ্জালকে আমরা চিনবো কিভাবে?
. দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার উপায় কি?

কেয়ামতের আগে দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে আল্লাহ দাজ্জালকে দিয়ে পরীক্ষা করবেন যে ঈসা (আঃ) এর মতো অলৌকিক কাজ করে দেখাবেএই জন্য তাকে বলা হয় মাসীহিদ-দাজ্জাল” অর্থাৎ প্রতারক বা মিথ্যা মাসীহ

দাজ্জালের পরিচয়ঃ
দাজ্জাল একজন তরুন মানুষ যার গায়ের রঙ হবে লালচে। তার চুল হবে ঘন কোঁকড়ানো। তার কপাল হবে চওড়া বুক হবে প্রশস্ত। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোতার ডান চোখ হবে কানা আর বাম চোখ হবে আংগুরের মতো ফোলাদেখে মনে হবে চোখ যেনো চোখের কোঠর থেকে বের হয়ে আসছে। দুই চোখের ঠিক মাঝখানে লেখাকাফ”, “ফা”, “রা” (كافرঅর্থাৎ কাফের– এই তিনটি অক্ষর লেখা থাকবে যার অর্থ হলো কাফির আর এই লেখা শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল ইমানদারেরাই পড়তে পারবে
দাজ্জালের আরেকট বৈশিষ্ট্য হবে তার কোনো ছেলে মেয়ে থাকবেনা বা সে হবে নিঃসন্তান
দাজ্জাল প্রথমে নিজেকে মাসীহ” বা ঈসা (আঃ) এর মতো অলৌকিক ক্ষমতার দাবী করবেআর পরে সে নিজেক সরাসরি আল্লাহ” হিসেবে দাবী করবে। কারণসে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী (যাতে মানুষকে পরীক্ষা করা যায়) অনেক অলৌকিক কাজ করে দেখাবে। সে আকাশের মেঘকে হুকুম করবে আর আল্লাহর ইচ্ছায় বৃষ্টি হবেআর যে এলাকার মানুষ তাকে আল্লাহ হিসেবে মানবেনা সেখানে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে দুর্ভিক্ষ হবে
দাজ্জালের অন্য অলৌকিক কাজের মধ্যে থাকবে তার সাথে রুটির পাহাড় পানির নহর থাকবে যা সে মানুষের মাঝে বিতরণ করবে
সে মৃত মানুষকে জীবিত করে দেখাবেসে একজনকে বলবে আমি আল্লাহ আমাকে মানো। এর প্রমান হিসেবে সে একটা জিনকে তার বাবা মার সুরতে হাজির করবে আর জিন তার বাবা মা সেজে বলবে – দাজ্জালই হচ্ছে আল্লাহতাকে আল্লাহ বলে মেনে নিতে বলবে
দাজ্জাল কখন আসবে?
এক হাদীসে বলা হয়েছেমানুষ যখন দাজ্জাল নিয়ে আলোচনা করবেনা তখন দাজ্জাল আসবে
অর্থাৎ মানুষ যখন দাজ্জাল নিয়ে কথা বলবেনাখতিব সাহবেরা মসজিদে খুতবা দেবেনাআলেমরা তাকে নিয়ে ওয়াজ করবেনা বা বই লিখবেনা। আর মানুষ তখন জানবেনা যে দাজ্জাল নামক একজন মানুষ একটা বড় ফেতনা সৃষ্টি করবে। আর তাই অজ্ঞ মানুষেরা খুব সহজেই দাজ্জালের ফেতনায় ঈমান হারিয়ে চির জাহান্নামী হবে (নাউযুবিল্লাহ)

দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকার উপায়?
দাজ্জাল কখন আসবে কেউ জানেনাহতে পারে কালকে সকালেই দাজ্জাল চলে আসতে পারে আবার হতে পারে এক হাজারদুই হাজার বছর পরে আসবে। তবে কেয়ামতের পূর্বে বহু ছোটো নিরর্দশন ইতিমধ্যেই দেখা যাওয়ায়সমস্ত আলেমরাই এখন মানুষকে সতর্ক করছেন – দাজ্জাল আসার সময় খুব কাছে চলে আসছে। তাই আমাদেরকে সতর্কতা নিতে হবে এর ফেতনা সম্পর্কে। সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত যে মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। এছাড়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শেখানো,নামাযের শেষে দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাওয়ার দুয়া করতে হবে
সর্বশেষঈসা (আঃ) দুনিয়াতে আবার আসবেন এবং তিনি তীরবিদ্ধ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন


দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য দুয়াঃ
. সালাম ফেরানোর পূর্বে দুয়া মাসুরাঃ
৪টি জিনিস থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুয়া মাসুরা আছে। কবরের আজাবজাহান্নামের আজাব,দুনিয়ার ফেতনা মৃত্যুর সময়ের ফেতনা দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য দুয়া মাসুরাঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এইগুলো থেকে বাঁচার জন্য ফরযনফল বা সুন্নতযেকোনো সালাতে তাশাহুদ দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর আগে এই দুয়া পড়তে বলেছেন
        اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ.
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী উযুবিকা মিন যাবিল ক্বাবরি ওয়া মিন যাবি জাহান্নামওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়াওয়াল্ মামাতিওয়ামিং সাররি ফিতনাতিল্ মাসীহিদ্-দাজ্জাল

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে কাবরের আযাব থেকে রক্ষা করো,আমাকে জাহান্নামের আযাবএবং দুনিয়ার ফিৎনা মৃত্যুর ফেতনা এবং দাজ্জালের ফিৎনা থেকে রক্ষা করো
বুখারী ২১০২মুসলিম /৪১২হিসনুল মুসলিমপৃষ্ঠা ৯০
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুয়া মাসুরা হিসেবে এই দুয়া পড়তে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন

. সুরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের হাত থেকে রক্ষা পাবে।” অন্য এক হাদীসে আছে,“সুরা কাহফের শেষ দশ আয়াত।
সহীহ মুসলিমরিয়াদুস স্বালেহীনঃ ১০২১
দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য সুরা কাহফের প্রথম বা শেষের ১০ আয়াত মুখস্থ করার কথা হাদীসে এসেছে,দুইটা হাদীসই সহীহ। যার যেই আয়াত ভালো লাগেপ্রথম বা শেষের যেকোন ১০ আয়াত মুখস্থ করলেই হবে। 

দাজ্জাল সম্পর্কে বিভ্রান্তিঃ

হিযবুত তাওহীদবায়েজীদ খান পন্নীমাওলানা মওদুদী (রহঃ)ইমরান নযর হোসাইন সহ বিভিন্ন দল এবং লোকেরা দাজ্জালের ব্যপারে মারত্মক অপব্যখ্যার শিকার হয়েছেন। হিযবুত তাওহীদবায়েজীদ খান এদের মতো বিভ্রান্ত লোকেরা দাজ্জালের অর্থ করেছে ইয়াহুদী খ্রীস্টান এবং তাদের মিডিয়াগুলোকে। এরা নির্বোধ লোকযারা হাদীস সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেনা। মাওলানা মওদুদী (রহঃ) অজ্ঞতাবশত দাজ্জালকে নিছক কল্প-কাহিনী বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)এবং সম্পর্কিত অসংখ্য সহীহ হাদীস সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছিলেনআল্লাহ তাকে মাফ করুন। অনুরূপভাবে দাজ্জালের ব্যপারে ইমরান নজর হোসাইন ভুল অর্থ করেছেন। আপনারা হক্ক বাতিল যাচাই করতে চাইলে শুধুমাত্র সহীহ বুখারী সহীহ মুসলিমে দাজ্জাল সম্পর্কিত সহীহ হাদীসগুলো পড়ুনইন শা আল্লাহ এতোটুকুই যথেষ্ঠ হবে