Pages

পাপ মোচনকারী কিছু আমল

পাপ মোচনকারী কিছু আমল

আমরা এতক্ষণ তওবা বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছি। এক্ষণে পাপ মোচনকারী কিছু আমলের কথা বলব। যা কুরআন ও সুন্নাহ নিঃসৃত। যেমন:

১. সুন্দর ও যথাযথভাবে ওযু করা ও মসসিদে যাওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ألا أدلكم على ما يمحو الله به الخطايا ويرفع به الدرجات قالوا بلى يا رسول الله قال إسباغ الوضوء على المكاره وكثرة الخطا إلى المساجد وانتظار الصلاة بعد الصلاة فذلكم الرباط فذلكم الرباط فذلكم الرباط»
আমি তোমাদের কী এমন আমলের কথা বলব না, যদ্দারা গোনাহ মাফ হয়ে মর্যাদা বৃদ্ধি হবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, কেন নয় বলুন হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, কঠিন অবস্থায় সুন্দর রূপে উযু করা, ঘন ঘন মসজিদে যাওয়া, এক নামাযের পর আরেক নামাযের অপেক্ষায় থাকা। এটাই হচ্ছে সীমানাপ্রহরা, এটাই সীমানাপ্রহরা, এই হচ্ছে তোমাদের জন্য সীমানাপ্রহরা। - সহীহ তারগীব তারহীব, নাসিরুদ্দিন আলবানী, মাকতাবাতুল মা‘আরিফ (রিয়াদ-১৯৮৮) ৩য় মুদ্রণ, হাদীস নং:১৮৫।

অপর এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ বলেন:
« أتاني الليلة ربي (في أحسن صورة فـ) قال يا محمد أتدري فيم يختصم الملأ الأعلى قلت نعم في الكفارات والدرجات ونقل الأقدام للجماعات وإسباغ الوضوء في السبرات وانتظار الصلاة بعد الصلاة ومن حافظ عليهن عاش بخير ومات بخير وكان من ذنوبه كيوم ولدته أمه »
“রাতে আমার প্রভু আমার কাছে সবেচে সুন্দর অবয়বে এসে বললেন, হে মুহাম্মদ! জানেন, উর্ধালোকে কী বিষয়ে বাদানুবাদ চলছে? বললাম, হ্যাঁ, জানি। কাফ্ফারা ও মর্যাদা বৃদ্ধি নিয়ে, জামাতে নামায পড়ার পদক্ষেপ নিয়ে, কঠিন সময়ে সুন্দররূপে উযু করা নিয়ে এবং এক নামাযের পর আরেক নামাযের জন্য অপেক্ষা বিষয়ে। যে এগুলো সংরক্ষণ করবে সে কল্যাণে থাকবে ও কল্যাণের সাথে মারা যাবে । আর তার গোনাহ মায়ের জন্ম দেওয়া দিনের মত নিষ্পাপ হবে।” -প্রাগুক্ত: হাদীস নং ১৮৭।

২. আরাফা ও আশুরার দিন রোযা রাখা
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« «صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ «صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ»
“আরাফাহ দিনের রোযা, আমি মনে করি আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা এক বছর আগের ও এক বছর পেছনের গোনাহ মাফ করে দেবেন। আর আশুরার রোযা, আমি মনে করি আল্লাহ তা‘আলা এক বছর পেছনের গোনাহ মাফ করে দেন।” - জামে তিরমিযি ,খ ৩,পৃ:১১৫ ও ১১৭।

৩. রমযানের কিয়ামুল লাইল
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« «مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
“যে লোক ঈমান ও ছাওয়াবের নিয়তে রমজানে কিয়ামুল লাইল করবে তার পেছনের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” সহীহ বুখারী ,খ:১,পৃ ১৬,হাদীস নং ৩৭

৪. কবুল হজ্জ
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
 «مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ»
“যে লোক হজ্জ করল কিন্তু অশ্লীল বাক্যব্যয় ও নাফরমানি করল না। মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট দিনের ন্যায় সে নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরবে।” সহীহ বুখারী ,খ:২,পৃ ১৩৩, হাদীস নং ১৫২১।
তিনি আরো বলেন:
«الحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة»
“কবুল হজ্জের বিনিময় জান্নাত ছাড়া কিছু নয়।” সহীহ বুখারী, ফতহুল বারী, ৩/৩৮২।

৫. কৃত গোনাহর মোকাবেলায় নেক কাজ করা
আল্লাহ বলেন-   
 ﴿ إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِۚ ﴾ [هود: ١١٤] 
নিশ্চয় নেক কাজগুলো গোনাহকে বিদূরিত করে দেয়। সূরা হুদ-১১৪।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামান প্রেরণ কালে ওসিয়াত করে বললেন:
«اتَّقِ اللَّهِ حَيْثُمَا كُنْتَ، وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا، وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ»
“যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো, কখনো অসৎকাজ করে ফেললে তৎক্ষণাৎ একটি নেক করা করে ফেল, তাহলে ওই অসৎ কাজটি আমলনামা থেকে মুছে যাবে। মানুষের সাথে সদাচারের সাথে মেলামেশা কর।” তিরমিযি,খ ৪,পৃ: ৩৫৫।

৬. সালাম ও সুন্দর কথা বিনিময়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إن من موجبات المغفرة بذل السلام وحسن الكلام»
‘সালাম ও উত্তম বাক্য বিনিময় হচ্ছে মাগফেরাত বা ক্ষমা অবধারিত করার অন্যতম মাধ্যম।’ আলবানী, সিলসিলাহ (রিয়াদ:মাকতাবাতুল মা‘আরিফ:১৯৯২) ১ম প্রকাশ,হাদীস নং ১০৩৫। 

৭. ঋণগ্রস্তকে সময় দেওয়া
«عن ابى هريرة عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: " كَانَ تَاجِرٌ يُدَايِنُ النَّاسَ، فَإِذَا رَأَى مُعْسِرًا قَالَ لِفِتْيَانِهِ: تَجَاوَزُوا عَنْهُ، لَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يَتَجَاوَزَ عَنَّا، فَتَجَاوَزَ اللَّهُ عَنْهُ "
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জনৈক ব্যবসায়ী মানুষের কাছে ঋণ দিত, যখনই সে কোনো ঋণদাতাকে অভাবগ্রস্ত দেখত তখনই তার লোকদের বলত, তাকে একটু সুযোগ দাও। হয়ত আল্লাহ আমাদের গোনাহ মাফ করবেন। পরে আল্লাহ তা‘আলা তার গোনাহ মাফ করেছিলেন।”- সহীহ বুখারী,খ ৩,পৃ:৫৮,হাদীস নং: ২০৭৮।

৮. পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমআ ও রমযানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة ورمضان إلى رمضان مكفرات لما بينهن إذا اجتنيب الكبائر».
পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমআ থেকে আরেক জুমআ, এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মাঝে কবিরা গোনাহ পরিহার করলে এর মধ্যকার সকল গোনাহর কাফ্ফারা হয়ে যায়।’- সহীহ মুসলিম,শরহে নববী, খ.৩, পৃ.১২০।

৯. সালাতের ওজু করা
হাদীসে এসেছে, ‘উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি সকলকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযু করে দেখাচ্ছিলেন। উযু শেষে তিনি বললেন,
سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول: «مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এই উযুর মত উযু করে দু‘রাকাত নামায পড়বে যে সালাতের মাঝে নিজের বিষয়ের কোনও কথা বলবে না; তার পেছনের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” - বুখারী: ১৫৯; মুসলিম: ২২৬।

১০. যিকর-আযকার গোনাহ বিদূরক
সা‘দ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من قال حين يسمع المؤذن: وأن اشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأن محمدا عبده ورسوله ، رضيت بالله ربا وبمحمد نبيا وبالإسلام دينا غفرله ذنبه».
“যে লোক মুয়াযযিনের আযান শুনে বলে, আমিও সাক্ষ্য দিই এক আল্লাহ ছাড়া কোনও ইলাহ নেই আর মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি রব হিসেবে আল্লাহকে, নবী হিসেবে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এবং দীন হিসেবে ইসলামের উপর সন্তুষ্ট আছি; তাহলে তার সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” - সহীহ মুসলিম, শরহে নববী প্রাগুক্ত, খ.৪, পৃ.৩০৯।

মু‘আয ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: 
যে লোক খাবার শেষে এই দোআ: ‘আলহামদুলিল্লাহি আত‘আমানী হাযাত ত্বায়ামা। ওয়া রাযাকানিহি মিন গায়রি হাওলিম মিন্নি ওয়ালা কুওয়াতা”, পড়বে, তার পেছনের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। - সহীহ মুসলিম, শরহে নববী, প্রাগুক্ত।

১২. পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়
বুখারী ও মুসলিমে আছে, 
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আচ্ছা! যদি তোমাদের কারো ঘরের সামনে একটি নদী থাকে আর তোমাদের কেউ যদি সে নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে তাহলে তার শরীরে কোনও ময়লা থাকতে পারে কী? তারা বললেন; না, কোনও ময়লা থাকতে পারে না। তিনি বলেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে এর সাথে তুলনা করে নাও। এর দ্বারা আল্লাহ গোনাহ ধুয়ে দেন।”- সহীহ বুখারী, ফতহুল বারী, খ.২, পৃ.১১।

১৩. নামাযে হেটে যাওয়া
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত:
«وذلك أنه إذا توضأ فأحسن الوضوء ، ثم خرج إلى المسجد لا يخرجه إلا الصلاة ، لم يخط خطوة إلا رفعه له درجة حط بها خطيئة»
‘কারণ যে কেউ সুন্দররূপে ওযু করে এরপর মসজিদের উদ্দেশ্যে বেরোয়; উদ্দ্যেশ্য নামায পড়া, তাহলে তাকে কদমে কদমে নেকী দেওয়া হয় এবং কদমে কদমে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।’ সহীহ বুখারী,ফতহুল বারী,খ.২, পৃ.৩১।

১৪. বেশী বেশী সিজদা দেওয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« عليك بكثرة السجود لله. فإنك لا تسجد لله سجدة إلا رفعك الله بها درجة وحط عنك بها خطيئة».
‘তুমি বেশী বেশী সিজদা করবে, কেননা তোমার প্রতিটি সিজদায় আল্লাহ তা‘আলা মর্যাদা বৃদ্ধি এবং গোনাহ মাফ করবেন।’ - শরহে মুসলিম,ইমাম নববী, খ.৪,পৃ.৪৫১।
এটি মূলত আল্লাহর কালাম: واسجد واقترب ‘এবং সিজদা কর ও নিকটবর্তী হও’ এর নেপথ্য নির্দেশ।

১৫. যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমিনের সাথে মিলে যাবে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إذا قال الإمام غير المغضوب عليهم ولا الضالين-  فقولوا أمين-  فمن وافق تأمينه تأمين الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه. »
‘ইমাম গাইরিল মাগদূবী আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বাল্লীন বললে, তোমরা আমীন বল। যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে তার পেছনের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ - সহীহ বুখারী,ফতহুল বারী, খ.২, পৃ.২৬৬।

১৬. কিয়ামুল লাইল
আবু উমামা বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেন:
«عليكم بقيام الليل ، فإنه داب الصالحين قبلكم ، وهو قربة لكم إلى ربكم ومكفرة للسيئات ومنهاة عن الإثم».
‘তোমরা কিয়ামুল লাইল করবে, কেননা এটি তোমাদের পূর্ববর্তী সালেহীনের প্রতীক এবং এটি তোমাদের প্রভুর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম, গোনাহ বিদূরক ও পাপ নিরোধক।’ -এরওয়াউল গালীল,আলবানী, খ.২, পৃ.৩৩।

১৭. আল্লাহর রাহে সংগ্রাম করে শহীদ হওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يغفرللشهيد كل ذنب إلا الدين»
‘ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’- সহীহ মুসলিম, শরহে ইমাম নববী, খ.১৩,পৃ.৩৩।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ۞إِنَّ ٱللَّهَ ٱشۡتَرَىٰ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَنفُسَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلۡجَنَّةَۚ ُ ١١١ ﴾ [التوبة: ١١١]
‘আল্লাহ তা‘আলা মু‘মিনদের জান-মাল ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে।’ - সুরা তাওবাহ: ১১১।
১৮. লাগাতার হজ্জ ও ওমরা করে যাওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ، فَإِنَّ الْمُتَابَعَةَ بَيْنَهُمَا، تَنْفِي الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ، كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ، خَبَثَ الْحَدِيدِ»
‘তোমরা লাগাতার হজ্জ-ওমরা করে যাও। কেননা এর অনুসরণ দ্বারা দারিদ্র্য ও গোনাহ মাফ হয়। যেভাবে কামারের হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে।’ সুনানে ইবনে মাজাহ ,খ:২, পৃ:৯৬৪, হাদীস নং: ২৮৮৭।

১৯. সাদাকাহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: 

﴿ إِن تُبۡدُواْ ٱلصَّدَقَٰتِ فَنِعِمَّا هِيَۖ وَإِن تُخۡفُوهَا وَتُؤۡتُوهَا ٱلۡفُقَرَآءَ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَيِّ‍َٔاتِكُمۡۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ٢٧١ ﴾ [البقرة: ٢٧١]   
“যদি তোমরা প্রকাশে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি খয়রাত গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কাজ-কর্মের খুব খবর রাখেন।”- সূরা আল বাকারা: ২৭১। 
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ المَاءُ النَّارَ ».
‘সাদাকাহ ঠিক সেভাবে গোনাকে দূর করে যেভাবে পানি আগুনকে নির্বাপিত করে।’- জামে তিরমিযি খ-২,পৃ-৫১২, হাদীস নং: ১৬৪।

২০. দণ্ডবিধান বাস্তবায়ন
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أيما عبد أصاب شيئا مما نهى الله عنه ثم أقيم عليه حده كفر عنه ذلك الذنب».
‘আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনও কাজ বান্দা করে ফেরার পর যদি তার উপর দণ্ড প্রয়োগ করা হয় তাহলে তা তার গোনাহর কাফ্ফারা হয়ে যায়।’- মুসতাদরাকে হাকেম, খ.৪, পৃ.১৪২।

২১. আল্লাহর নৈকট্যের আশায় যিকরের মজলিসে গমন
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ما من قوم اجتمعوا يذكرون الله لا يريدون بذلك إلا وجهه ، إلا ناداهم مناد من السماء أن تولوا مغفرور لكم ، وقد بدلت سيئاتكم حسنات».
‘কোন সম্প্রদায় যখন আল্লাহকে রাজি-খুশী করার উদ্দেশ্যে যিকরের জন্য জমায়েত হয় তখন আকাশ থেকে জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন যে, তোমরা সকলে (প্রভুর) ক্ষমা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করো আর তোমাদের সকল গোনাহ নেকীতে পরিণত করে দেওয়া হয়েছে।’ - মুসনাদে আহমাদ, খ-৩,পৃ. ১৪২।

উপসংহার
আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু। বান্দার প্রতি রহমদিল। সুতরাং তাঁর দরবারে আমাদের বিনম্রচিত্তে ইস্তেগফারের উদ্দেশ্যে নত হওয়া দরকার। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, গোনাহ যত দীর্ঘ হবে ততই শেকড় মজবুত হবে। যেমন: কেউ একটি গাছ উপড়াতে গিয়েও উপড়াল না বরং ফেলে রাখল, ভাবল পরের বছর উপড়ালেও চলবে কিন্তু পরের বছর এর শেকড় আরো মজবুত হল আর লোকটার শক্তিও কমে গেল, সুতরাং সে কি করে গাছ উপড়াবে? গোনাহকে ফেলে রাখলে পরিণতি এই-ই হয়। তাই আমাদের আজই এবং এখনই তওবা করা দরকার।

No comments:

Post a Comment