Pages

আল্লাহ তায়ালা তওবা কারীদের অত্যন্ত ভালবাসেন।

আল্ হামদু লিল্লাহ্ ওয়াছ্ ছালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ্।

আল্লাহ তায়ালা তওবা কারীদের অত্যন্ত ভালবাসেন। বান্দা যখন তার অপরাধের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন। আল্লাহ রব্বুল আলামীন বান্দার তওবাতে কী পরিমাণ আনন্দিত হন তা নিম্নোক্ত হাদীসটিতে দেখুন,

প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাদেম আবু হামযা আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
اللَّهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلَى بَعِيرِهِ ، وَقَدْ أَضَلَّهُ فِى أَرْضِ فَلاَةٍ
“কোনও লোক বিজন মরু প্রান্তরে উট হারিয়ে যাবার পর পুনরায় তা ফেরত পেলে যে পরিমাণ আনন্দে উদ্বেলিত হয় মহান আল্লাহ বান্দার তওবাতে তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন।”  
সহীহ বুখারী,অনুচ্ছেদ: তওবা, হা/৫৮৩৪, শামেলা

আর সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে,
لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
“বান্দার তওবাতে আল্লাহ তোমাদের ঐ ব্যক্তি থেকে অধিক আনন্দিত হন, যে বিজন মরু প্রান্তরে তার উট হারিয়ে ফেলল। যাতে তার খাদ্য-পানীয় ছিল। উট হারানো কারণে হতাশ হয়ে গাছের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ল। এমন পরিস্থিতিতে সে হঠৎ দেখতে পেল তার উট তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে উটের লাগাম ধরে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বলতে লাগল, “হে আল্লাহ,তুমি আমার বান্দা আমি তোমার প্রভু!” অতি আনন্দের কারণে সে এভাবে ভুল কথা বলে ফেলল।”
সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: তওবা করার প্রতি উৎসাহ দান এবং এতে খুশি হওয়া, হা/৪৯৩৪, শামেলা

আল্লাহু আকবর! কত বিশাল এ আনন্দ! নি:সন্দেহে এটি এত বড় আনন্দের বিষয় যা কারও পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়। আপনি নিজের কথা কল্পনা করুন যে, আপনি এমন এক মরুভূমিতে অবস্থান করছেন যেখানে আপনার আশে পাশে কোন মানুষ নেই। নেই কোন খাদ্য ও পানীয়। এমন জনমানব শূন্য মরুভূমিতে আপনার উট হারিয়ে গেছে যাতে আপনার খাদ্য-পানীয় মজুদ ছিল। আপনি অনেক খোঁজা-খুঁজি করেও উটের কোন হদিস পেলেন না। পরিশেষে, বেঁচে থাকার সব আশা ছেড়ে দিয়ে কোন গাছের নিচে শুয়ে অনিবার্য মৃত্যুর প্রহর গুণতে লাগলেন।

এমন পরিস্থিতি চোখ খুলেই হঠাৎ দেখতে পেলেন, আপনার উট আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গাছের সাথে তার লাগাম বাঁধা রয়েছে। তার উপরে খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি সব কিছু ঠিকমত আছে। তখন আপনি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উটের লাগাম হাতে নিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, “হে আল্লাহ তুমি আমার বান্দা; আমি তোমার প্রভু”। আনন্দে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আপনি উল্টো কথা বলে ফেললেন। আপনার উদ্দেশ্য ছিল এ কথা বলা, “হে আল্লাহ,তুমি আমার প্রভু;আমি তোমার বান্দা।”

আপনি কি কল্পনা করতে পারেন এ আনন্দ? আমার ধারণা,আপনি বলবেন, হ্যাঁ। তাহলে জেনে রাখুন, এমন অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর দুয়ার থেকে পুনর্জীবন লাভকারী ব্যক্তির চেয়েও আল্লাহ বান্দার তওবায় বেশি খুশি হন।

এটি মূলত: দয়াময় আল্লাহর সীমাহীন দয়া ও অনুগ্রহের অনুপম প্রমাণ বহন করে। তিনি এ কারণে বান্দার তওবাতে আনন্দিত হন না যে, আমাদের তওবা তাঁর বড় প্রয়োজন। তিনি এসব থেকে মুখাপেক্ষী হীন। বরং এটা তাঁর অন্তহীন দয়া, অপরিসীম ক্ষমা ও অনুপম ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। 

সুতরাং হে প্রিয় মুসলিম ভাই, কাল বিলম্ব না করে দ্রুত ছুটে আসুন এবং অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর নিকট তওবা করুন।

দুআ ও প্রার্থনার ফযীলত

দুআ ও প্রার্থনার ফযীলত

১- দুআ এক মহান ইবাদত
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (আল-মুমিন : ৬০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
الدعاء هو العبادة .(رواه أبو داود 1479 والترمذي 2969 وقال : هذا حديث صحيح، وابن ماجة 3828(
দুআ-ই হল ইবাদত (আবু দাউদ, তিরমিজী ও ইবনু মাজা)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :
أفضل العبادة هو الدعاء.)أخرجه الحاكم وصححه الألباني في صحيح الجامع 1122(
সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হল দুআ (হাকেম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :
ليس شيء  أكرم على الله تعالى من الدعاء . )أخرجه الترمذي 3370 وحسنه الألباني في صحيح الجامع 5392(
আল্লাহর কাছে দুআর চেয়ে উত্তম কোনো ইবাদত নেই (তিরমিজী)

২-দুআ অহংকার থেকে দূরে রাখে
আল্লাহ তাআলা বলেন : 
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ.
তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (আল-মুমিন : ৬০)
এ আয়াতে প্রমাণিত হল, যারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না তারা অহংকারী। অতএব প্রার্থনা করলে অহংকার থেকে মুক্ত থাকা যাবে
ইমাম শাওকানী রহ. বলেন : এ আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দুআ অন্যতম ইবাদত। আর এটা পরিহার করা আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করার নামান্তর। এ অহংকারের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো অহংকার হতে পারে না। কিভাবে মানুষ আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করতে পারে যে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সব ধরনের জীবনোপকরণ দিয়েছেন, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং ভাল-মন্দের প্রতিদান দিয়ে থাকেন  (তুহফাতুয যাকিরীন : আশ-শাওকানী)

৩-দুআ কখনো বৃথা যায় না
যেমন হাদীসে এসেছে :
عن أبي سعيد الخدري رضى الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال : ما من مسلم يدعو بدعوة، ليس فيها إثم ولا قطيعة رحم إلا أعطاه الله بـها إحدى ثلاث : إما أن يعجل له دعوته، وإما أن يدخرها له في الآخرة وإما أن يصرف عنه من السوء مثلها. قالوا : إذا نكثر قال : الله أكثر)رواه البخاري في الأدب المفرد 710 وصححه الألباني وأحمد(
আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দুআ করে, যে দুআতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দুআ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দুআ সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দুআর প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দুআর মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবিগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দুআ করতে থাকবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন 
(বুখারী : আল-আদাবুল মুফরাদ ও আহমদ)
এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনো বৃথা যায় না

দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোআ

বিদআতী কাজ বা আমলে যুক্ত থাকার পরিণতি

সাধারণ অর্থে সুন্নাতের বিপরীত বিষয়কে বিদ‘আত বলা হয়। আর শার‘ঈ অর্থে বিদআত হলো: ‘‘আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে ধর্মের নামে নতুন কোনো প্রথা বা ‘ইবাদাতের প্রচলন করা, যা শরী‘আতের কোনো সহীহ দলীল-প্রমাণের উপর ভিত্তিশীল নয়।” (আল ই‘তিসাম ১/১৩ পৃষ্ঠা)।
বিদ‘আতীর কাজের পরিণতি ৩টি:

১. ঐ বিদ‘আতী কাজ বা আমল আল্লাহর দরবারে কখনোই গৃহীত হবে না।
২. বিদ‘আতী কাজ বা আমলের ফলে মুসলিম সমাজে গোমরাহী বিস্তার লাভ করে এবং
৩. এ গোমরাহীর চূড়ান্ত ফলাফল বা পরিণতি হলো, বিদ‘আত কার্য সম্পাদনকারীকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের শারী‘আতে এমন নতুন কিছু সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।” (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “আর তোমরা দীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজন করা হতে সাবধান থেকো! নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সংযোজন বিদ‘আত, আর প্রত্যেকটি বিদ‘আত গোমরাহীর পথনির্দেশ করে, আর প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হলো জাহান্নাম।” (আহমাদ, আবূ দাঊদ, আত্ তিরমিযী)
মূল : শাইখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী, শাইখ মুহাম্মাদ আবদুন নূর মাদানী
গ্রন্থনা : মাওলানা মিরাজ রহমান
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোআ

 ঋণ মুক্তির জন্য দো‘আ
«اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ».
(আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান সিওয়া-ক)।
“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালাল দ্বারা পরিতুষ্ট করে আপনার হারাম থেকে ফিরিয়ে রাখুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ছাড়া অন্য সকলের থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দিন।”

[ তিরমিযী ৫/৫৬০, নং ৩৫৬৩। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৮০।]


হতাশা ও দুর্দশা থেকে মুক্তির বিশেষ দোআ:
- «لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظّالِمِينَ».
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায-যা-লিমীন।
আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র-মহান, নিশ্চয় আমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত।
[তিরমিযী ৫/৫২৯, নং ৩৫০৫; হাকেম এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন, যাহাবী সেটা সমর্থন করেছেন, ১/৫০৫।  সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৬৮।]

«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ».
আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনে ওয়া গালাবাতির রিজা-লি
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
[বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩; সেখানে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোআটি বেশি বেশি করতেন। আরও দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩; আরও দেখুন যা পৃষ্ঠায় ১৩৭ নং এ বর্ণিত হবে।]

পাপের ইচ্ছা পরিত্যগ করাও পূণ্য!

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণনা বার্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেছেন, আমার বান্দা কোনো নেক কাজ করবে বলে যদি মনে মনে ভাবে তবে তা সম্পাদন করার পূর্বেই আমি তার জন্য একটি সওয়াব লিখে দিই। পরে যদি তা সম্পাদন করে; তবে তার দশগুণ সাওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে যদি কোনো অসৎ কাজ করবে বলে মনে মনে ভাবে, তবে তা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত মাফ করে দিই। কিন্তু তা সম্পাদন করলে তদনুরূপ একটি গুনাহ্ লিখি। 
রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন, ফেরেশ্তাগণ আবেদন জানায় : হে প্রতিপালক! তোমার এই বান্দা, একটি পাপকর্মের ইচ্ছা করছে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তো তার সম্যক দ্রষ্টা। তিনি উত্তর করেন, অপেক্ষা কর, যদি সম্পাদন করে ফেলে, তবে সে অনুপাতে লিখবে, আর যদি তা পরিত্যাগ করে, তবে সে স্থলে একটি সওয়াব লিখে দিবে। কারণ আমার জন্যই সে তা পরিত্যাগ করেছে। রাসূলুল্লাহ [সা.] আরো বলেন, তোমাদের মধ্যে যে তার ইসলামে নিষ্ঠাবান হয়, তার কৃত প্রত্যেকটি নেককাজের বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লেখা হয়। পক্ষান্তরে তার কৃত প্রত্যেকটি বদকাজ তার সমান লেখা হয়। (মৃত্যুর মাধ্যমে) আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাত না হওয়া পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে। (মুসলিম:২০৫)    

নেককাজের ইচ্ছাও ভালো। কোনো নেককাজের আন্তরিক ইচ্ছা করলেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে ছওয়াব দিবেন। যদিও এর উপর কোনো বাধা ছাড়াই আমল না করে থাকুক না কেন। আল্লাহ তা‘আলা এটি বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। নেককাজের আন্তরিক ইচ্ছার জন্য ছওয়াবের কারণ হলো, নেককাজের ইচ্ছাও উত্তম হয়ে থাকে। এটি ভালো কাজের জন্য পথপ্রদর্শক। আর সৎকাজের ইচ্ছা দৈহিক আমল না হলেও অন্তরের একটি আমল বটে। প্রশ্ন হতে পারে যে, যদি অন্তরের আমল ছওয়াব দানের ক্ষেত্রে সমাদৃত হয়, তাহলে এর বিপরীত অবস্থায় গুনাহকারীকে তিরস্কার কেন করা হবে না? এর উত্তর সহজ। খারাপ কাজের কল্পনার পর তদনুযায়ী বাস্তবে কাজ পরিহার করার কারণে অন্তরে কুকল্পনার কাফ্ফারা হয়ে গেছে। কারণ সে খারাপ ইচ্ছা ও কল্পনা বর্জন করেছে, খাহেশাতে নফসানীর বিরোধিতা করেছে। আল্লামা খাত্তাবী রহ.-এর মতে, গুনাহ বর্জনের ফলে তখনই নেকি লেখা হয় যখন গুনাহ বর্জনের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা ত্যাগ করে। আসলে সে-ই প্রকৃত অর্থে গুনাহ বর্জনকারী। যেমন- কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যভিচার করার ইচ্ছা করল, কিন্তু তাকে একাকী পেয়েও আল্লাহর ভয়ে এ কাজ থেকে বিরত রইল। তবে তার জন্য ছওয়াব লিখা হবে। কিন্তু যদি ব্যভিচারের কল্পনা ও বাস্তবায়নের মাঝে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে সে তা করতে না পারে, তবে ছওয়াব লিখা হবে না। 

‘ফাজায়েলে আমল’ নামক বেদাতী বই পড়া জায়েজ নয়।

সৌদী আরবের সবচাইতে বড় ফতোয়া কমিটির ফাতওয়াঃ
১. ‘ফাজায়েলে আমল’ নামক বেদাতী বই পড়া জায়েজ নয়। 
২. ফাজায়েলে আমলে বর্ণিত ভ্রান্ত ‘শিরকি ও কুফুরী কাহিনী’ বিশ্বাস করে, এমন ইমামের পেছনে নামাজ পড়া জায়েজ নয়।

সৌদী স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়া,
ফতোয়া নং- ২১৪১২,
ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ২৮২-২৮৪।

প্রশ্নঃ শাইখ মুহাম্মাদ যাকারিয়া (রহঃ) ভারত ও পাকিস্তানের বিখ্যাত ধর্মীয় পণ্ডিতগণের মধ্যে একজন, বিশেষ করে তাবলীগ জামায়াতের (ইসলামের দিকে ডাকে এমন একটি দলের) অনুসারীদের মধ্যে। তার লিখা অনেকগুলো কিতাব রয়েছে যার মধ্যে “ফাজায়েলে আমল” একটি, যেটি তাবলীগ জামাত দলের ধর্মীয় আলোচনার সময় পড়া হয়ে থাকে এবং যেটিকে এই দলের সদস্যরা সহীহ বুখারীর মতই শ্রদ্ধা করে। আমি তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। এই বইটি পড়তে গিয়ে আমি দেখলাম এর মধ্যে কিছু কিছু বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাস্য। সুতরাং আমি আমার এই সমস্যাটা আপনাদের সুবিখ্যাত কমিটির কাছে পেশ করছি, এই আশায় যে, আপনারা হয়তো এর সমাধান দিতে পারবেন। এই বর্ণনাগুলো আহমেদ রিফাঈর লিখা থেকে নেয়া, যেখানে তিনি দাবী করেছেন যে, হজ্জ্ব শেষে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা জেয়ারত করতে যান এবং এই কবিতাংশটি পাঠ করেনঃ


যখন আমি দূরে ছিলাম, আমি আমার আত্মাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিতাম
আমার পক্ষ থেকে মাটিকে চুম্বন করার জন্যে
এখন যেহেতু আমি স্বশরীরে ও আত্মায় উপস্থিত
(হে নবী আপনি) আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, যেন আমি চুম্বন করতে পারি।


এই বাক্যগুলো বলার পর রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডান হাত তাঁর কবর বের হয়ে আসে, আর রিফাঈ তাতে চুম্বন করেন। এই ঘটনার বর্ণনা আছে আল-সুয়ূতী রচিত “আল-হাওয়ী” নামক গ্রন্থে। তিনি আরো দাবী করেছেন যে, প্রায় ৯ (অথবা ৯০) হাজার মুসলিম এই মহান ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, এবং সেই পূন্যময় হাতও সবাই দেখতে পান যার মধ্যে শাইখ আবদুল কাদের জ্বিলানী (রহঃ) ও তখন মসজিদে নববীর মধ্যে থেকে তা প্রত্যক্ষ করেছেন। এই কাহিনীর আলোকে আমি নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো করতে চাইঃ

১. এটি কী কোন সত্য ঘটনা নাকি অবাস্তব কল্পকাহিনী?
২. সুয়ূতী রচিত কিতাবটি “আল-হাওয়ী” সম্বন্ধে আপনাদের মত কী যেটির মধ্যে এই কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
৩. যদি এই গল্প সঠিক না হয়, এমন কোন ঈমামের পেছনে নামাজ পড়া জায়েজ হবে কী, যেই ইমাম এই গল্প বয়ান করে ও বিশ্বাস করে?
৪. এমন কিতাব কোন মসজিদে কোন ধর্মীয় আলোচনা সভায় পড়া জায়েজ হবে কী, যেমন ব্রিটেনে তাবলীগিদের মসজিদে এই কিতাব পড়ে থাকে? এই বইটি সৌদী আরবেও ব্যাপক প্রচলিত, বিশেষ করে মদীনা মুনাওয়ারাতে কারণ এর লেখক এখানে অনেকদিন যাবত বাস করেছিলেন।


শ্রদ্ধেয় উলামাবৃন্দ, দয়া করে আমাদেরকে সন্তোষজনক জবাব দিয়ে পথ দেখাবেন কী, যেন আমি এটিকে স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করে বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী ও অন্য সকল মুসলিম ভাইদের মাঝে বিলি করতে পারি এই বিষয়ে কথা বলার সময়?

উত্তরঃ এই গল্পটি একটি মিথ্যা ও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কাহিনী। মৃতব্যাক্তি সম্বন্ধে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, নবী-রাসুল বা সাধারণ মুসলিম যেই হোন না কেন, তিনি তাঁর কবরে নাড়াচাড়া করতে পারেন না। যেটি দাবী করা হয় যে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিফাঈর জন্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বা অন্য কারো জন্যে, তা সত্য নয়; বরং, এটি একটি ভিত্তিহীন গুজব বা মতিভ্রম, যা কোনমতেই বিশ্বাস করা উচিত নয়।
তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকর (রাঃ) এর জন্যে তাঁর হাত বাড়িয়ে দেন নি, উমার (রাঃ) এর জন্যে দেন নি, অথবা অন্য কোন সাহাবীর জন্যেও না। কারোই উচিত হবে না সুয়ূতীর কিতাব “আল-হাওয়ী” থেকে এই কাহিনী বর্ণনা করে বিভ্রান্ত হওয়া, কেননা অনেক পণ্ডিত মত দিয়েছেন যে, সুয়ূতী তার কাহিনী সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া, যে ইমাম এই কাহিনী বিশ্বাস করে তার পেছনে সলাত আদায় করাও জায়েজ হবে না, কারণ তিনি তাঁর আকিদাহগত দিক দিয়ে খাঁটি মুসলিম নন এবং তিনি কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। ফাজায়েলে আমল বা এই জাতীয় কিতাব মসজিদে বা অন্য কোথায়ও পড়া জায়েজ নেই যার মধ্যে কুসংস্কার রয়েছে এবং মানুষের কাছে মিথ্যার প্রচার করে, কারণ এসব মানুষকে বিভ্রান্ত করে ও তাদের মধ্যে কুসংস্কার ছড়ায়।


সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ সকল মুসলিমকে সত্যের পথে পরিচালিত করুন।
তিনি সর্বশ্রোতা ও উত্তরদাতা। আল্লাহ আমাদের সফলতা দান করুন। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবার ও তাঁর সাহাবীগণের উপর আল্লাহ্ শান্তি ও দয়া বর্ষন করুন।

স্থায়ী ফাতওয়া কমিটির সম্মানিত মুফতিদের নামঃ
১. চেয়ারম্যানঃ আল্লামাহ শায়খ আব্দুল আ’জিজ ইবনে আবদুল্লাহ আলে-শায়খ হা’ফিজাহুল্লাহ।
২. সদস্যঃ আল্লামাহ শায়খ সালেহ আল-ফওজান হা’ফিজাহুল্ল...
৩. সদস্যঃ আল্লামাহ শায়খ বাকর আবু জায়েদ রাহি’মাহুল্লাহ।
৪. সদস্যঃ আল্লামাহ আব্দুল্লাহ ইবনে গুদাইয়্যান রাহি'মাহুল্লাহ।

মূল ফতোয়ার লিংকঃ-
http://bit.ly/1L6WU62

১০টি গুনাহের যে কোন একটি করলেই চিরস্থায়ী জাহান্নাম

১০টি গুনাহের যে কোন একটি করলেই চিরস্থায়ী জাহান্নাম: 


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সকল বান্দার উপর ইসলামকে একমাত্র এবং পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে দিয়েছেন। আর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই দ্বীনের দাওয়াতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করবে সে হেদায়াত প্রাপ্ত হবে পক্ষান্তরে যে তাঁর থেকে বিমুখ হবে সে পথভ্রষ্ট হবে।
তিনি বহু আয়াতে মুরতাদ হওয়ার মাধ্যম, শির্ক ও কুফরীর সকল প্রকার হতে সতর্ক করেছেন। 
সেই সঙ্গে বিভিন্ন ইসলাম বিধ্বংসী কার্য কলাপ সম্পদনের মাধ্যমে মুরতাদ ও ইসলাম হতে বহিস্কার হয়ে যায়।
ইসলাম বিধ্বংসী কাজগুলোর মধ্যে প্রধনতম হচ্ছে ১০টি। আজ আমরা সে সম্পর্কে জানবো, যাতে সবাই বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থেকে ঈমানকে রক্ষা করতে পারি।
১) আল্লাহর ইবাদতে শির্ক করা। এই শির্কের অন্তর্ভূক্ত হল: মৃতকে আহবান করা, তাদের নিকট ফরিয়াদ করা, তাদের জন্য নযর-নেয়াজ মানা ও পশু যবেহ করা। যেমন কোন ব্যক্তি জ্বিনের জন্য বা কোন কবেরর জন্য যবেহ করল ইত্যাদি।
আল্লাহ বলেনঃ إنَّ اللهَ لاَيَغْفِرُ أنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ ماَ دُوْنَ ذلكَ لِمَنْ يَشاَءُ (নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না। উহা ব্যতিরেকে উহার নিন্ম পর্যায়ের পাপ সবই তিনি যাকে ইচছা ক্ষমা করেন)[নিসা : ১১৬]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ إنَّهُ مَنْ يُشْرِكُ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظاَّلِمِيْنَ مِنْ أنْصَارِ (নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শির্ক করবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম, আর এই সমস্ত যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না)[সূরা মায়েদাহ্‌ : ৭২]
২) নিজের ও আল্লাহর মধ্যে মধ্যস্থতা সাব্যস্ত করে তাদের উপরেই ভরসা রাখা। এই ধরণের ব্যক্তি সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের বলে গণ্য।
৩) মুশরিককে মুশরিক বা কাফেরকে কাফের না বলা বা তাদের কুফরীতে সন্দেহ পোষণ করা কিংবা তাদের ধর্মকে সঠিক ভাবা।
৪) এই বিশ্বাস করা যে অন্যের আদর্শ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের চাইতে অধিক পূর্ণাঙ্গ। কিংবা এই বিশ্বাস করা যে, অন্যের বিধান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধান অপেক্ষা অধিক উত্তম। (যেমন কেউ কেউ তাগুতের বিধানকে নবীর বিধানের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিযে থাকে) সে ব্যক্তি কাফের বলে গণ্য হবে।
৫) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনিত কোন বস্তুকে ঘৃণার চোখে দেখা। এমতাবস্থায় সে কাফের বলে গণ্য হবে যদিও সে ঐ বস্তুর উপর বাহ্যিক ভাবে আমল করে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ذلكَ بِأنَّهُمْ كَرِهُوا ماَ أنْزَل اللهُ فَأحْبَطَ أعْماَلَهُمْ (ইহা এজন্যই যে, তারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিষয়কে ঘৃণা করেছে সুতরাং আল্লাহ তাদের আমল গুলোকে পণ্ড করে দিয়েছেন)[সূরা মুহাম্মাদ : ৯]
৬) দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে বা তার পুরস্কার কিংবা শাস্তিকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ قُلْ أبِاللهِ وآياَتِهِ وَرَسُوْلِهِ كُنْتُمْ تستهزئون . لاَ تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إيْماَنِكُمْ (আপনি বলুন (হে রাসূল) তোমরা কি আল্লাহর সাথে, স্বীয় আয়াত সমূহের সাথে এবং রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? কোন প্রকার ওজর-আপত্তির অবতারণা কর না। তোমরা ঈমান আনায়নের পর আবার কুফরী করেছ)[সূরা তাওবাহ্‌:৬৫-৬৬]
৭) যাদু-টোনা করা: যাদুর অন্যতম প্রকার হল তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্যে দুজন মানুষের বন্ধন তৈরী করা বা তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করা। সুতরাং যে ব্যক্তি যাদু করবে বা তাতে রাজি হবে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলার বলেনঃ وماَ يُعَلِّماَنِ مِنْ أحَدٍ حَتىَّ يَقُوْلاَ إنَّماَ نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ (ঐ দুজন (হারূত- মারুত ফেরেস্তা) কাউকে যাদু শিক্ষা দিতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত এই ক্থা না বলতেন-নিশ্চয় আমরা (তোমাদের জন্য) পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং (আমাদের নিকট যাদু শিখে) কাফের হয়ো না)[সূরা বাকারা:১০২]
৮) মুশরিকদেরকে মুসলমানদের বিরূদ্ধে সাহায্য সহযোগিতা করা। আল্লাহ তাআলার বাণী: وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإنَّهُ مِنْهُمْ ، إنَّ اللهَ لاَ يَهْدِيْ الْقَوْمَ الظاَّلِمِيْنَ (তোমাদের মধ্য হতে যে ওদের (অর্থাৎ বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই দলভূক্ত বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালেমদেরকে হেদায়াত দান করেন না)[সূরা মায়েদা:৫১]
৯) এ বিশ্বাস করা যে, কারও জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীয়তের বাইরে থাকার অবকাশ রয়েছে। যেমন (এক শ্রেণীর ভণ্ড সূফীর ধারণা অনুপাতে) অবকাশ ছিল খিযির (আ:)এর জন্য মূসার (আ:) শরীয়ত হতে বাইরে থাকার। এ বিশ্বাসেও সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإسْلاَمِ دِيْناً فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوِ فِيْ الآخِرَةِ مِنَ الْخاَسِرِيْنَ (যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম অন্বেষণ করবে তার থেকে তা গ্রহন করা হবে না। এবং সে পরকালে ক্ষতি গ্রস্থদের দলভূক্ত হবে)[সূরা আলে ইমরান: ৮৫]
১০) সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর দ্বীন হতে বিমুখ থাকা। সে ব্যাপারে জ্ঞানার্জন না করা, তদানুযায়ী আমল না করা, এই ধরণের মন-মানষিকতার ব্যক্তিও কাফের বলে পরিগণিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَمَنْ أظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآياَتِ رَبِّهِ ثُمَّ أعْرَضَ عَنْهاَ ، إناَّ مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ (ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কে বেশী যালিম (অত্যাচারী) হতে পারে, যাকে উপদেশ দেওযা হয়েছে স্বীয় প্রতিপালকের আয়াত সমূহ দ্বারা অত:পর সে উহা হতে বিমুখ হয়েছে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কারী)[সূরা সাজদাহ্‌:২২]
কোন লোক এ সকল বিষয়ে লিপ্ত হলে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে চাই সে মজা করার জন্য এ সকল কাজ করুক বা গুরুত্ব সহকারে করুক, সেচ্ছায় করুক বা ভয়ে করুক। অবশ্য কাউকে যদি বাধ্য করা হয় তবে তার ব্যাপার আলাদ। এ সমস্ত ইসলাম বিধ্বংশ বিষয় অত্যন্ত মারাত্মক। তার পরও তা ব্যাপকভাবে এসব সংগঠিত হয়ে থাকে।
আল্লাহ তা’আলা যে আমাদের সবাইকে এই ১০টি বিষয় থেকে হেফাজত করেন। সবাই যেন মহামূল্যবান ঈদান নিয়ে তার দরবারে হাজির হতে পারি। আমীন॥ মূলঃ শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ্‌ বিন বায

সাইয়েদুল ইসতিগফার, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠতম দুআ


সাইয়েদুল ইসতিগফার, এতে রয়েছে জান্নাতের ঘোষণা! 



সাইয়েদুল ইসতিগফার(আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠতম দুআ) টি কি আমাদের জানা আছে? হয়ত অনেকের জানা আছে আবার অনেকের জানা নেই। কিন্তু প্রতিটি মুসলমানের জন্য দু’আটি জানা দরকার। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতে আমাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। এটা একটি বিরাট ঘোষণা। নি:সন্দেহে তা জান্নাত প্রত্যাশী মানুষের আনন্দিত হওয়ার বিষয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন, 
“যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।” (বুখারী)
তাই নিচে দু’আটির আরবী মূল টেক্সট সহ, বাংলা উচ্চারণ এবং বালা অনুবাদ দেয়া হল। সুতরাং আসুন এই গুরুত্বপূর্ণ দু’আটি যাদের মুখস্ত নেই তারা মুখস্ত করি এবং সকলেই আমল করার চেষ্টা করি।
দুআটি হল:
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُك وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানী ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আউযুবিকা মিন শার্ রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা  ওয়া আবূউলাকা বিযামবী
ফাগ্ ফির্ লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা”
অর্থঃ
“হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক,
তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই।
তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম
আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি।
আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি।
যত অপরাধ করেছি সুগুলোও স্বীকার করছি।
অত:এব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।”

দুয়াটার শুদ্ধ উচ্চারণ শুনুন এই লিংকে –

لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এ কালেমার অর্থ ও তার দাবী

  لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এ কালেমার অর্থ ও তার দাবী


 لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর অর্থ হচ্ছে, সত্য এবং হক মাবুদ বলতে যে ইলাহকে বুঝায় তিনি হলেন একমাত্র আল্লাহ, যাঁর কোনো শরীক নেই এবং তিনিই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার অধিকারী তাই এ মহান কালেমার অর্থে এটাও অন্তর্ভুক্ত যে, তিনি ব্যতীত যত মাবুদ আছে সব অসত্য এবং বাতিলতাই তারা ইবাদত পাওয়ার অযোগ্য
এজন্য অধিকাংশ সময় আল্লাহ তাআলার ইবাদাতের আদেশের সাথে সাথে তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করতে নিষেধ করা সম্বলিত নির্দেশনা এসেছে। কেননা আল্লাহর ইবাদতের সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করা হলে সে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ ۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ﴾ [النساء: ٣٦] 
“আর তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করো না।” (আন্ নিসা-৩৬)
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٥٦ ﴾ [البقرة: ٢٥٦] 
“অতঃপর যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে সে ব্যক্তি দৃঢ় অবলম্বন ধারণ করল যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।” (আল্ বাকারাহ-২৫৬)
তিনি আরো বলেন,
  ﴿ وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ﴾ [النحل: ٣٦] 
“আর নিশ্চয় আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি এ বলে যেতোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর।” (আন্ নাহাল-৩৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مَنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُهُ، وَدَمُهُ»
“যে ব্যক্তি বললআল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং সে আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব কিছুর ইবাদতকে অস্বীকার করল তার জীবন ও সম্পদ অন্যের জন্য নিষেধ করল।”[10]
 প্রত্যেক রাসূলই তাঁর জাতিকে বলেছেন,
﴿ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓ ﴾ [الاعراف: ٥٩] 
“তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই” (আল-আ‘রাফ৫৯) এতদ ব্যতীত এ সম্পর্কে আরো প্রমাণাদি রয়েছে
ইবনে রজব বলেন, কালেমার এই অর্থ বাস্তবায়িত হবে তখনযখন বান্দাহ لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর স্বীকৃতি দান করার পর এটা বিশ্বাস করবে যেআল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মাবুদ হওয়ার একমাত্র যোগ্য ঐ সত্তা যাকে ভয়-ভীতিবিনয়-ভালবাসাআশা-ভরসা সহকারে আনুগত্য করা হয়যার নিকট প্রার্থনা করা হয়যার সমীপে দো‘আ করা হয় এবং যার অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা হয়। আর এ সমস্ত কাজ একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য প্রযোজ্য নয়
এ জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মক্কার কাফেরদেরকে বললেনতোমরা বলোلاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ উত্তরে তারা বললো,
﴿ أَجَعَلَ ٱلۡأٓلِهَةَ إِلَٰهٗا وَٰحِدًاۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيۡءٌ عُجَابٞ ٥ ﴾ [ص: ٥] 
“সে কি সমস্ত ইলাহকে এক ইলাহতে পরিণত করেছে এ তো অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়।” (ছোয়াদ-৫)
এর অর্থ হলো তারা বুঝতে পারল যেএ কালেমার স্বীকৃতি মানেই এখন হতে মূর্তিপূজা বাতিল করা হলো এবং ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করা হলো আর তারা কখনও এমনটি কামনা করে না তাই এখানেই প্রমাণিত হলো যেلاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর অর্থ এবং এর দাবী হচ্ছে ইবাদতকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব কিছুর ইবাদত পরিহার করা

এজন্য কোনো ব্যক্তি যখন বলে, لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ তখন সে এ ঘোষণাই প্রধান করে যেইবাদতের একমাত্র অধিকারী আল্লাহ তাআলাই এবং তিনি ব্যতীত অন্য কিছুর ইবাদাত যেমনকবরপূজা পীরপূজা ইত্যাদি সমস্ত কিছুই বাতিল। এর মাধ্যমে গোরপূজারী ও অন্যান্যরা যারা মনে করে যেلاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর অর্থ হচ্ছে এই বলে স্বীকৃতি দেয়া যে, আল্লাহ আছেনঅথবা তিনি সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি কোনো কিছু উদ্ভাবন করতে সক্ষমতাদের এই সমস্ত মতবাদ ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হলো।

আবার অনেকে মনে করে যে, কালেমা لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর অর্থ হলো কেবল “হাকেমিয়াহ বা হুকুমদাতা-বিধানদাতা অথবা সার্বভৌমত্ব শুধুমাত্র আল্লাহর” এবং মনে করে যে, যে কেউ তার জীবনে এ বিশ্বাস করল, কেবলমাত্র এর দ্বারা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ এর ব্যাখ্যা করল, সে নিঃশর্ত তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করলএরপর যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পূজা -অর্চনা করা হয় বা মৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে বিশ্বাস করা হয় যেতাদের নামে মান্নতকোরবানী ও ভেট প্রদান করার মাধ্যমে তাদের নৈকট্য লাভ করা সম্ভব বা তাদের কবরের চার পার্শ্বে ঘুরে তাওয়াফ করাতে কিংবা তাদের কবরের মাটিকে বরকতময় মনে করাতে কোনো অসুবিধা নেই এবং এতে কিছু আসে যায় না। এ লোকেরা অনুধাবন করতে পারেনি যে এদের মত এ ধরনের আক্বীদা-বিশ্বাস তৎকালীন মক্কার কাফেরগণও পোষণ করত তারা বিশ্বাস করত যেআল্লাহই সৃষ্টিকর্তাএকমাত্র উদ্ভাবক এবং তারা অন্যান্য দেব- দেবীর ইবাদত শুধুমাত্র এজন্যই করত যেতারাই তাদেরকে আল্লাহ তাআলার খুব নিকটবর্তী করে দিবে। তারা মনে করত না যেঐ সব দেব-দেবী সৃষ্টি করতে কিংবা রিযিক দান করতে সক্ষম। অতএব ‘হাকেমিয়াহ বা বিধানদাতা বা সার্বভৌমত্ব আল্লাহর জন্য’ এবং এটাই ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’এর প্রকৃত অর্থ বা একমাত্র অর্থ এমনটি নয় বরং নিঃসেন্দেহে হাকেমিয়াহ বা বিধান প্রদান বা সার্বভৌমত্ব এগুলো আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট এবং তা এ কালেমার অর্থের একটি অংশ মাত্র কেননা কেউ যদি এক দিকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে যেমনআইন আদালত বা বিচার বিভাগ ইত্যাদিতে শরীয়তের হুকুম প্রতিষ্ঠা করে অন্য দিকে আল্লাহর ইবাদতে তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে তা হলে এর কোনো মূল্যই হবে না। সুতরাং শুধু হাকেমিয়্যাহ বা সার্বভৌমত্ব আল্লাহর, এটা প্রতিষ্ঠাই কালেমা লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ এর প্রকৃত উদ্দিষ্ট অর্থ নয়।

যদি لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর অর্থ এটাই হতো যেমনটি ঐ সমস্ত লোক ধারণা করে তাহলে মক্কার মুশরিকদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের কোনো দ্বন্দ্বই থাকত না তিনি তাদেরকে যদি শুধুমাত্র এতটুকু আহবানই করতেন যেতোমরা এ মর্মে স্বীকৃতি প্রদান কর যে,আল্লাহ তা‘আলা উদ্ভাবন করতে সক্ষম অথবা আল্লাহ বলতে একজন কেউ আছেনঅথবা তোমরা ধন-সম্পদ এবং অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে শরীয়াত অনুযায়ী ফায়সালা কর এর সাথে সাথে তিনি যদি তাদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার কথা বলা থেকে বিরত থাকতেন তাহলে কালবিলম্ব না করে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহ্বানে সাড়া দিত। কিন্তু তারা আরবী ভাষী হওয়ার কারণে বুঝতে পেরেছিল যে, لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থই হচ্ছে সমস্ত দেব-দেবীর ইবাদতকে বাতিল বলে ঘোষণা করা। তারা আরো বুঝেছিল যেএই কালেমা শুধুমাত্র এমন কতগুলো শব্দের সমারোহ নয় যেযার কোনো অর্থ নেই বরং এসব কিছু বুঝার কারণেই তারা এর স্বীকৃতি দান থেকে বিরত থাকল এবং বলল,
﴿ أَجَعَلَ ٱلۡأٓلِهَةَ إِلَٰهٗا وَٰحِدًاۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيۡءٌ عُجَابٞ ٥ ﴾ [ص: ٥] 
“সে কি সমস্ত ইলাহগুলোকে এক ইলাহতে পরিণত করলএ তো অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়।” [সূরা ছোয়াদ:৫]
যেমন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন,
﴿ إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ ٣٥ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوٓاْ ءَالِهَتِنَا لِشَاعِرٖ مَّجۡنُونِۢ ٣٦ ﴾ [الصافات: ٣٥،  ٣٦] 
“তাদেরকে যখন বলা হতো‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই’ তখন তারা উদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং বলতআমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের সকল উপাস্যকে পরিত্যাগ করব? (আস-সাফফাত-৩৫-৩৬)
অতএব তারা বুঝল যেلاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর মানেই হচ্ছে সমস্ত কিছুর ইবাদত ছেড়ে দিয়ে একমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদত করা। তারা যদি এক দিকে কালেমা ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলত অন্যদিকে দেব- দেবীর ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকত তা হলে এটা হত স্ববিরোধিতাঅথচ এমন স্ববিরোধিতা থেকে তারা নিজদেরকে বিরত রেখেছে। কিন্তু আজকের কবর পূজারীরা এই জঘন্যতম স্ববিরোধিতা থেকে নিজদেরকে বিরত রাখছে না। তারা একদিকে বলে, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ অন্যদিকে মৃত ব্যক্তি এবং মাজার ভিত্তিক ইবাদতের মাধ্যমে এ কালেমার বিরোধিতা করে থাকে। অতএব ধ্বংস ঐ সকল ব্যক্তির জন্য যাদের চাইতে আবু জাহাল ও আবু লাহাব ছিল কালেমা ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ এর অর্থ সম্পর্কে আরো বেশী অভিজ্ঞ।

সংক্ষিপ্ত কথা হলোযে ব্যক্তি কালেমার অর্থ জেনে বুঝে কালেমার দাবী অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে এর স্বীকৃতি দান করল এবং প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সর্বাবস্থায় নিজকে শির্ক থেকে বিরত রেখে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতকে নির্ধারণ করলসে ব্যক্তি প্রকৃত অর্থে মুসলিম আর যে এই কালেমার মর্মার্থকে বিশ্বাস না করে এমনিতে প্রকাশ্যভাবে এর স্বীকৃতি দান করল এবং এর দাবী অনুযায়ী গতানুগতিকভাবে কাজ করল সে ব্যক্তি মূলত মুনাফিক আর যে মুখে এ কালেমা বলল এবং শির্ক এর মাধ্যমে এর বিপরীত কাজ করল সে প্রকৃত অর্থে স্ববিরোধী মুশরিক সুতরাং এ কালেমা উচ্চারণের সাথে সাথে অবশ্যই এর অর্থ জানতে হবে। কারণ অর্থ জানাই হচ্ছে এর দাবী অনুযায়ী আমল করার মাধ্যম। আল্লাহ বলেন,
﴿ إِلَّا مَن شَهِدَ بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٨٦ ﴾ [الزخرف: ٨٦] 
 “তবে যারা জেনে বুঝে সত্যের সাক্ষ্য দিল তারা ব্যতীত (অন্যরা সুপারিশের অধিকারী হবে না)’’ (আয-যখরুফ৮৬)
আর এ কালেমার চাহিদা অনুযায়ী আমল হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল কিছুর ইবাদতকে অস্বীকার করা এ কালেমা দ্বারা মূল উদ্দেশ্য তো তাই।
আর কালেমা ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ এর অন্যতম দাবী হলো ইবাদতমোয়ামেলাত (লেন-দেন) হালাল-হারামসর্বাবস্থায় আল্লাহর বিধানকে মেনে নেওয়া এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও প্রবর্তিত বিধানকে বর্জন করা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُۚ ﴾ [الشورى: ٢١] 
“তাদের কি এমন কোনো শরীক দেবতা আছে যারা তাদের জন্য বিধান রচনা করবে যার অনুমতি আল্লাহ দেন নি। (সূরা আশ- শুরা২১)
এ থেকে বুঝা গেল অবশ্যই ইবাদতলেন-দেন এবং মানুষের মধ্যে বিতর্কিত বিষয়সমূহ ফয়সালা করতে আল্লাহর বিধানকে মেনে নিতে হবে এবং এর বিপরীত মানব রচিত সকল বিধানকে ত্যাগ করতে হবে। এ অর্থ থেকে আরো বুঝা গেল যেসমস্ত বিদ‘আত এবং কুসংস্কার যা জ্বীন ও মানবরূপী শয়তান রচনা করেতাও পরিত্যাগ করতে হবে আর যে এগুলোকে গ্রহণ করবে সে মুশরিক বলে গণ্য হবে যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ وَإِنۡ أَطَعۡتُمُوهُمۡ إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ ١٢١ ﴾ [الانعام: ١٢١] 
“যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা মুশরিক” (আল-আন‘আম: ১২১)
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿ ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ ﴾ [التوبة: ٣١]
“আল্লাহ ব্যতীত তারা তাদের পণ্ডিত ও পুরোহিতদেরকে রবরূপে গ্রহণ করেছে’’। (সূরা আত-তাওবাহ৩১)

সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আদী ইবনে হাতেম আত-ত্বায়ীর সামনে উল্লেখিত আয়াত পাঠ করেন তখন ‘আদী বললেনহে আল্লাহর রাসূলআমরা আমাদের পীর-পুরোহিতদের ইবাদত করি না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনআল্লাহ যে সমস্ত জিনিস হারাম করেছেন তোমাদের পীর-পুরোহীতরা তা হালাল করেছেআর আল্লাহ যে সমস্ত জিনিস হালাল করেছেন তা তারা হারাম বা অবৈধ করেছেতোমরা কি এতে তাদের অনুসরণ কর না আদী বললেনঅবশ্যই হাঁএতে আমরা তাদের অনুসরণ করতাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বললেনএটাই তাদের ইবাদত।

আশ-শাইখ আবদুর রহমান ইবন হাসান বলেন, সুতরাং অন্যায় কাজে তাদের আনুগত্য করার জন্যই এটা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের ইবাদত হয়ে গেল এবং এরই মাধ্যমে পীর পুরোহিতদের তারা নিজেদের রব হিসাবে গ্রহণ করল। আর এ হলো আমাদের বর্তমান জাতির অবস্থা এবং এটা এক প্রকার বড় শির্ক যার মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদ বা তাওহীদকে অস্বীকার করা হয়যে একত্ববাদ বা তাওহীদের অর্থ বহন করে কালেমা “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” এর সাক্ষ্য অতএব এখানে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যেএই ইখলাসের কালেমা (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ) এসব বিষয়কে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে কারণ তা এ কালেমার অর্থের সম্পূর্ণ বিরোধী।
অনুরূভাবে মানব রচিত আইনের কাছে বিচার চাওয়া, বিচারের জন্য সেগুলোর দ্বারস্থ হওয়া পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। কেননাবিচার ফয়সালাতে আল্লাহর কিতাব কুরআনের কাছে যাওয়া ওয়াজিব। তদ্রূপ আল্লাহর কিতাব ব্যতীত অন্য কোনো আইন ও বিধানের কাছে বিচারের জন্য যাওয়া পরিত্যাগ করাও ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন,
﴿ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ ﴾ [النساء: ٥٩] 
“তারপর তোমরা যদি কোনো বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড় তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ কর।” (আন্ নিসা-৫৯)
আল্লাহ আরো বলেন,
 ﴿وَمَا ٱخۡتَلَفۡتُمۡ فِيهِ مِن شَيۡءٖ فَحُكۡمُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبِّي ﴾ [الشورى: ١٠] 
“তোমরা যে বিষয়ই মতভেদ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে, আর সে আল্লাহ, তিনিই আমার রব”। (সূরা আশ্-শূরা ১০)
যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম মোতাবেক ফয়সালা করে না তার বিষয়ে আল্লাহর ফয়সালা হলো এই যেসে কাফের অথবা যালেম অথবা ফাসেক এবং তার ঈমানদার থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। যা প্রমাণ করে যে, আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী যে ব্যক্তি ফয়সালা করবে না সে কাফের হয়ে যাবে যখন সে শরীয়ত বিরোধী ফায়সালা দেয়াকে জায়েয বা মোবাহ মনে করবে অথবা মনে করবে যেতার ফয়সালা আল্লাহ তাআলার ফয়সালা থেকে অধিক উত্তম বা অধিক গ্রহণীয় এমন বিশ্বাস পোষণ করা হবে তাওহীদ পরিপন্থীকুফুরী ও শির্ক এবং তা لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এই কালেমার অর্থের একেবারে বিরোধী
আর যদি বিচারক বা শাসক শরীয়ত বিরোধী ফয়সালা দানকে মোবাহ বা জায়েয মনে না করেবরং শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালা প্রদানকে ওয়াজিব মনে করে কিন্তু পার্থিব লালসার বশবর্তী হয়ে নিজের মনগড়া আইন দিয়ে ফয়সালা করে তবে এটা ছোট শির্ক ও ছোট কুফরীর পর্যায়ে পড়বে তবে এটাও لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর অর্থের পরিপন্থী। অতএব لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ একটি পূর্ণাঙ্গ পথ ও পদ্ধতি, এ কালেমাই মুসলিমদের জীবনকে সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং পরিচালনা করবে তাদের সমস্ত ইবাদত-বন্দেগী এবং সমস্ত কাজ কর্মকে। এই কালেমা শুধুমাত্র কতগুলো শব্দের সমারোহ নয় যেনা বুঝে একে সকাল সন্ধ্যার তাসবীহ হিসাবে শুধুমাত্র বরকতের জন্য পাঠ করবে আর এর দাবী অনুযায়ী কাজ করা থেকে বিরত থাকবে অথবা এর নির্দেশিত পথে চলবে না মূলতঃ অনেকেই একে শুধুমাত্র গতানুগতিক ভাবে মুখে উচ্চারণ করে থাকেকিন্তু তাদের বিশ্বাস ও কর্ম এর পরিপন্থী
কালেমা لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর আরো দাবী হলো, আল্লাহর যত গুবাচক নাম ও তাঁর নিজ সত্তার যে সমস্ত নাম আছে যে গুলোকে তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন অথবা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন সে সব নাম ও গুণাবলীকে যথাযথভাবে সাব্যস্ত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠ ﴾ [الاعراف: ١٨٠] 
“আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সবচেয়ে উত্তম নামসমূহকাজেই সে সমস্ত নাম ধরেই তাঁকে ডাক, আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল অবশ্যই পাবে (আল-আ‘রাফ: ১৮০)

ফাতহুল মজিদ কিতাবের লেখক বলেন, আরবদের ভাষায় প্রকৃত ‘ইলহাদ’ বলতে বুঝায়সঠিক পথ পরিহার করে বক্র পথ অনুসরণ করা এবং বক্রতার দিকে ঝুকে পড়ে পথভ্রষ্ট হওয়াকে।
 আল্লাহর সমস্ত নাম এবং গুনবাচক নামের মধ্যেই তাঁর পরিচয় এবং কামালিয়াত ফুটে উঠে বান্দার নিকট। লেখক আরো বলেনঅতএব আল্লাহর নামসমূহের বিষয়ে বক্রতা অবলম্বন করা মানে ঐ সমস্ত নামকে অস্বীকার করাঅথবা ঐ সমস্ত নামের অর্থকে অস্বীকার বা অপ্রয়োজনীয় বা অপ্রাসঙ্গিক মনে করাঅথবা অপব্যাখ্যার মাধ্যমে এর সঠিক অর্থকে পরিবর্তন করে দেওয়াঅথবা আল্লাহর ঐ সমস্ত নাম দ্বারা তাঁর মাখলুকাতকে বিশেষিত করা। যেমন ওহদাতুল ওয়াজুদ পন্থিরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে এক করে সৃষ্টির ভাল-মন্দ অনেক কিছুকেই আল্লাহর নামে বিশেষিত করেছে।
অতএব যে ব্যক্তি মুতাযিলা সম্প্রদায় বা জাহমিয়া বা আশায়েরা মতবাদে বিশ্বাসীদের অনুরূপ আল্লাহর নামসমূহের ও গুনাবলীর অপব্যাখ্যা করলঅথবা সেগুলোকে অপ্রয়োজনীয় ও অর্থ-সারশুন্য মনে করলঅথবা সেগুলোর অর্থ বোধগম্য নয় বলে মনে করল এবং এসব নাম ও গুণাবলীর সুমহান অর্থের উপর বিশ্বাস আনলো না সে মুলত আল্লাহর নাম ও গুণাবলীতে বক্রতার পথ অবলম্বন করল এবং ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ এর অর্থ ও উদ্দেশ্যেরই বিরোধিতা করল। কেননা ‘‘ইলাহ’’ হলেন তিনি, যাঁকে তার নাম ও সিফাতের মাধ্যমে ডাকা হয় এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করা হয়। আল্লাহ বলেন, (فَادْعُوْهُ بِهَا“ঐ সমস্ত নামের মাধ্যমে তাঁকে ডাক’’। আর যার কোনো নাম বা সিফাত নেই সে কিভাবে ‘‘ইলাহ’’ বা উপাস্য হতে পারে এবং কিসের মাধ্যমে তাকে ডাকা হবে?

ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেন, শরীয়াতের বিভিন্ন হুকুম আহকামের বিষয়ে এ উম্মতের পূর্ববর্তী মানুষগণ বিতর্কে লিপ্ত হলেও সিফাত সংক্রান্ত আয়াতসমূহে বা এসম্পর্কে যে সংবাদ এসেছে তাতে কেউ বিতর্কে লিপ্ত হয়নি। বরং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যেআল্লাহর এসমস্ত আসমায়ে হুসনা এবং সিফাতের প্রকৃত অর্থ বুঝার পর ঠিক যেভাবে তা বর্ণিত হয়েছে, কোনো প্রকার অপব্যাখ্যা ছাড়াই তা ঐ ভাবেই মেনে নিতে হবে এবং স্বীকৃতি দান করতে হবে। এখানে প্রমাণিত হলো যেআল্লাহর আসমায়ে হুসনা এবং সিফাতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ তাওহীদ ও রিসালাতকে দৃঢ়ভাবে প্রতিপন্ন করার এটাই মূল উৎস এবং তাওহীদের স্বীকৃতর জন্য এ সমস্ত আসমায়ে হুসনার স্বীকৃতি এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এজন্যই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন; যাতে কোনো প্রকার সংশয়ের অবকাশ না থাকতে পারে
হুকুম-আহকাম তথা বিধি-বিধানের আয়াতগুলো বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ ব্যতীত সবার জন্য বুঝে উঠা একটু কঠিন কাজকিন্তু আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত আয়াতসমূহের সাধারণ অর্থ সব মানুষই বুঝতে পারে। অর্থাৎ তাঁর সত্তা ও আকৃতি বুঝা ব্যতীত আসল অর্থ সকলই বুঝতে পারে।
লেখক আরো বলেনএটি এমন একটি বিষয় যা সহজাত প্রবৃত্তিসুস্থ মস্তিস্ক এবং আসমানী কিতাবসমূহের মাধ্যমে বুঝতে পারা যায় যেযার মধ্যে পূর্ণতা অর্জনের সমস্ত গুণাবলী না থাকে সে কিছুতেই ইলাহ বা মা‘বুদপরিচালক ও রব হতে পারে না সে হবে নিন্দিত ত্রুটিপূর্ণ ও অপরিপক্ক এবং পূর্বাপর কোনো অবস্থায় সে প্রশংসিত হতে পারে না। সর্বাবস্থায় প্রশংসিত হবেন তিনিই যাঁর মধ্যে কামালিয়াত বা পূর্ণতা অর্জনের সমস্ত গুণাবলী বিদ্যমান থাকে। এ জন্যই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পূর্বকালীন মনীষীগণ সুন্নাতের উপর বা আল্লাহর সিফাত সাব্যস্তকরণ যেমনতাঁর সকল সৃষ্টির উর্ধ্বে থাকাতাঁর কথোপকথন ইত্যাদির উপর যে সব গ্রন্থ রচনা করেছেন সেগুলোর নাম দিয়েছেন ‘‘আত-তাওহীদ’’ হিসেবে। কারণ এ সমস্ত গুণাবলীকে অগ্রাহ্য বা অস্বীকার করা এবং এর সাথে কুফরী করার অর্থ হলো, সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করা এবং তাঁকে না মানা। আর আল্লাহর একত্ববাদ বা তাওহীদের অর্থ হচ্ছে তাঁর সমস্ত কামালিয়তের সিফাতকে মেনে নেওয়া, সমস্ত দোষত্রুটি ও অন্য কিছুর সাথে তুলনীয় হওয়া থেকে তাঁকে পবিত্র মনে করা।