Pages

পাপ মোচনকারী কিছু আমল

পাপ মোচনকারী কিছু আমল

আমরা এতক্ষণ তওবা বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছি। এক্ষণে পাপ মোচনকারী কিছু আমলের কথা বলব। যা কুরআন ও সুন্নাহ নিঃসৃত। যেমন:

১. সুন্দর ও যথাযথভাবে ওযু করা ও মসসিদে যাওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ألا أدلكم على ما يمحو الله به الخطايا ويرفع به الدرجات قالوا بلى يا رسول الله قال إسباغ الوضوء على المكاره وكثرة الخطا إلى المساجد وانتظار الصلاة بعد الصلاة فذلكم الرباط فذلكم الرباط فذلكم الرباط»
আমি তোমাদের কী এমন আমলের কথা বলব না, যদ্দারা গোনাহ মাফ হয়ে মর্যাদা বৃদ্ধি হবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, কেন নয় বলুন হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, কঠিন অবস্থায় সুন্দর রূপে উযু করা, ঘন ঘন মসজিদে যাওয়া, এক নামাযের পর আরেক নামাযের অপেক্ষায় থাকা। এটাই হচ্ছে সীমানাপ্রহরা, এটাই সীমানাপ্রহরা, এই হচ্ছে তোমাদের জন্য সীমানাপ্রহরা। - সহীহ তারগীব তারহীব, নাসিরুদ্দিন আলবানী, মাকতাবাতুল মা‘আরিফ (রিয়াদ-১৯৮৮) ৩য় মুদ্রণ, হাদীস নং:১৮৫।

অপর এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ বলেন:
« أتاني الليلة ربي (في أحسن صورة فـ) قال يا محمد أتدري فيم يختصم الملأ الأعلى قلت نعم في الكفارات والدرجات ونقل الأقدام للجماعات وإسباغ الوضوء في السبرات وانتظار الصلاة بعد الصلاة ومن حافظ عليهن عاش بخير ومات بخير وكان من ذنوبه كيوم ولدته أمه »
“রাতে আমার প্রভু আমার কাছে সবেচে সুন্দর অবয়বে এসে বললেন, হে মুহাম্মদ! জানেন, উর্ধালোকে কী বিষয়ে বাদানুবাদ চলছে? বললাম, হ্যাঁ, জানি। কাফ্ফারা ও মর্যাদা বৃদ্ধি নিয়ে, জামাতে নামায পড়ার পদক্ষেপ নিয়ে, কঠিন সময়ে সুন্দররূপে উযু করা নিয়ে এবং এক নামাযের পর আরেক নামাযের জন্য অপেক্ষা বিষয়ে। যে এগুলো সংরক্ষণ করবে সে কল্যাণে থাকবে ও কল্যাণের সাথে মারা যাবে । আর তার গোনাহ মায়ের জন্ম দেওয়া দিনের মত নিষ্পাপ হবে।” -প্রাগুক্ত: হাদীস নং ১৮৭।

২. আরাফা ও আশুরার দিন রোযা রাখা
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« «صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ «صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ»
“আরাফাহ দিনের রোযা, আমি মনে করি আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা এক বছর আগের ও এক বছর পেছনের গোনাহ মাফ করে দেবেন। আর আশুরার রোযা, আমি মনে করি আল্লাহ তা‘আলা এক বছর পেছনের গোনাহ মাফ করে দেন।” - জামে তিরমিযি ,খ ৩,পৃ:১১৫ ও ১১৭।

৩. রমযানের কিয়ামুল লাইল
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« «مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
“যে লোক ঈমান ও ছাওয়াবের নিয়তে রমজানে কিয়ামুল লাইল করবে তার পেছনের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” সহীহ বুখারী ,খ:১,পৃ ১৬,হাদীস নং ৩৭

৪. কবুল হজ্জ
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
 «مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ»
“যে লোক হজ্জ করল কিন্তু অশ্লীল বাক্যব্যয় ও নাফরমানি করল না। মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট দিনের ন্যায় সে নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরবে।” সহীহ বুখারী ,খ:২,পৃ ১৩৩, হাদীস নং ১৫২১।
তিনি আরো বলেন:
«الحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة»
“কবুল হজ্জের বিনিময় জান্নাত ছাড়া কিছু নয়।” সহীহ বুখারী, ফতহুল বারী, ৩/৩৮২।

৫. কৃত গোনাহর মোকাবেলায় নেক কাজ করা
আল্লাহ বলেন-   
 ﴿ إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِۚ ﴾ [هود: ١١٤] 
নিশ্চয় নেক কাজগুলো গোনাহকে বিদূরিত করে দেয়। সূরা হুদ-১১৪।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামান প্রেরণ কালে ওসিয়াত করে বললেন:
«اتَّقِ اللَّهِ حَيْثُمَا كُنْتَ، وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا، وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ»
“যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো, কখনো অসৎকাজ করে ফেললে তৎক্ষণাৎ একটি নেক করা করে ফেল, তাহলে ওই অসৎ কাজটি আমলনামা থেকে মুছে যাবে। মানুষের সাথে সদাচারের সাথে মেলামেশা কর।” তিরমিযি,খ ৪,পৃ: ৩৫৫।

৬. সালাম ও সুন্দর কথা বিনিময়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إن من موجبات المغفرة بذل السلام وحسن الكلام»
‘সালাম ও উত্তম বাক্য বিনিময় হচ্ছে মাগফেরাত বা ক্ষমা অবধারিত করার অন্যতম মাধ্যম।’ আলবানী, সিলসিলাহ (রিয়াদ:মাকতাবাতুল মা‘আরিফ:১৯৯২) ১ম প্রকাশ,হাদীস নং ১০৩৫। 

৭. ঋণগ্রস্তকে সময় দেওয়া
«عن ابى هريرة عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: " كَانَ تَاجِرٌ يُدَايِنُ النَّاسَ، فَإِذَا رَأَى مُعْسِرًا قَالَ لِفِتْيَانِهِ: تَجَاوَزُوا عَنْهُ، لَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يَتَجَاوَزَ عَنَّا، فَتَجَاوَزَ اللَّهُ عَنْهُ "
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জনৈক ব্যবসায়ী মানুষের কাছে ঋণ দিত, যখনই সে কোনো ঋণদাতাকে অভাবগ্রস্ত দেখত তখনই তার লোকদের বলত, তাকে একটু সুযোগ দাও। হয়ত আল্লাহ আমাদের গোনাহ মাফ করবেন। পরে আল্লাহ তা‘আলা তার গোনাহ মাফ করেছিলেন।”- সহীহ বুখারী,খ ৩,পৃ:৫৮,হাদীস নং: ২০৭৮।

৮. পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমআ ও রমযানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة ورمضان إلى رمضان مكفرات لما بينهن إذا اجتنيب الكبائر».
পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমআ থেকে আরেক জুমআ, এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মাঝে কবিরা গোনাহ পরিহার করলে এর মধ্যকার সকল গোনাহর কাফ্ফারা হয়ে যায়।’- সহীহ মুসলিম,শরহে নববী, খ.৩, পৃ.১২০।

৯. সালাতের ওজু করা
হাদীসে এসেছে, ‘উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি সকলকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযু করে দেখাচ্ছিলেন। উযু শেষে তিনি বললেন,
سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول: «مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এই উযুর মত উযু করে দু‘রাকাত নামায পড়বে যে সালাতের মাঝে নিজের বিষয়ের কোনও কথা বলবে না; তার পেছনের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” - বুখারী: ১৫৯; মুসলিম: ২২৬।

১০. যিকর-আযকার গোনাহ বিদূরক
সা‘দ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من قال حين يسمع المؤذن: وأن اشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأن محمدا عبده ورسوله ، رضيت بالله ربا وبمحمد نبيا وبالإسلام دينا غفرله ذنبه».
“যে লোক মুয়াযযিনের আযান শুনে বলে, আমিও সাক্ষ্য দিই এক আল্লাহ ছাড়া কোনও ইলাহ নেই আর মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি রব হিসেবে আল্লাহকে, নবী হিসেবে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এবং দীন হিসেবে ইসলামের উপর সন্তুষ্ট আছি; তাহলে তার সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” - সহীহ মুসলিম, শরহে নববী প্রাগুক্ত, খ.৪, পৃ.৩০৯।

মু‘আয ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: 
যে লোক খাবার শেষে এই দোআ: ‘আলহামদুলিল্লাহি আত‘আমানী হাযাত ত্বায়ামা। ওয়া রাযাকানিহি মিন গায়রি হাওলিম মিন্নি ওয়ালা কুওয়াতা”, পড়বে, তার পেছনের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। - সহীহ মুসলিম, শরহে নববী, প্রাগুক্ত।

১২. পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়
বুখারী ও মুসলিমে আছে, 
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আচ্ছা! যদি তোমাদের কারো ঘরের সামনে একটি নদী থাকে আর তোমাদের কেউ যদি সে নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে তাহলে তার শরীরে কোনও ময়লা থাকতে পারে কী? তারা বললেন; না, কোনও ময়লা থাকতে পারে না। তিনি বলেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে এর সাথে তুলনা করে নাও। এর দ্বারা আল্লাহ গোনাহ ধুয়ে দেন।”- সহীহ বুখারী, ফতহুল বারী, খ.২, পৃ.১১।

১৩. নামাযে হেটে যাওয়া
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত:
«وذلك أنه إذا توضأ فأحسن الوضوء ، ثم خرج إلى المسجد لا يخرجه إلا الصلاة ، لم يخط خطوة إلا رفعه له درجة حط بها خطيئة»
‘কারণ যে কেউ সুন্দররূপে ওযু করে এরপর মসজিদের উদ্দেশ্যে বেরোয়; উদ্দ্যেশ্য নামায পড়া, তাহলে তাকে কদমে কদমে নেকী দেওয়া হয় এবং কদমে কদমে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।’ সহীহ বুখারী,ফতহুল বারী,খ.২, পৃ.৩১।

১৪. বেশী বেশী সিজদা দেওয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« عليك بكثرة السجود لله. فإنك لا تسجد لله سجدة إلا رفعك الله بها درجة وحط عنك بها خطيئة».
‘তুমি বেশী বেশী সিজদা করবে, কেননা তোমার প্রতিটি সিজদায় আল্লাহ তা‘আলা মর্যাদা বৃদ্ধি এবং গোনাহ মাফ করবেন।’ - শরহে মুসলিম,ইমাম নববী, খ.৪,পৃ.৪৫১।
এটি মূলত আল্লাহর কালাম: واسجد واقترب ‘এবং সিজদা কর ও নিকটবর্তী হও’ এর নেপথ্য নির্দেশ।

১৫. যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমিনের সাথে মিলে যাবে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إذا قال الإمام غير المغضوب عليهم ولا الضالين-  فقولوا أمين-  فمن وافق تأمينه تأمين الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه. »
‘ইমাম গাইরিল মাগদূবী আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বাল্লীন বললে, তোমরা আমীন বল। যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে তার পেছনের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ - সহীহ বুখারী,ফতহুল বারী, খ.২, পৃ.২৬৬।

১৬. কিয়ামুল লাইল
আবু উমামা বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেন:
«عليكم بقيام الليل ، فإنه داب الصالحين قبلكم ، وهو قربة لكم إلى ربكم ومكفرة للسيئات ومنهاة عن الإثم».
‘তোমরা কিয়ামুল লাইল করবে, কেননা এটি তোমাদের পূর্ববর্তী সালেহীনের প্রতীক এবং এটি তোমাদের প্রভুর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম, গোনাহ বিদূরক ও পাপ নিরোধক।’ -এরওয়াউল গালীল,আলবানী, খ.২, পৃ.৩৩।

১৭. আল্লাহর রাহে সংগ্রাম করে শহীদ হওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يغفرللشهيد كل ذنب إلا الدين»
‘ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’- সহীহ মুসলিম, শরহে ইমাম নববী, খ.১৩,পৃ.৩৩।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ۞إِنَّ ٱللَّهَ ٱشۡتَرَىٰ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَنفُسَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلۡجَنَّةَۚ ُ ١١١ ﴾ [التوبة: ١١١]
‘আল্লাহ তা‘আলা মু‘মিনদের জান-মাল ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে।’ - সুরা তাওবাহ: ১১১।
১৮. লাগাতার হজ্জ ও ওমরা করে যাওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ، فَإِنَّ الْمُتَابَعَةَ بَيْنَهُمَا، تَنْفِي الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ، كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ، خَبَثَ الْحَدِيدِ»
‘তোমরা লাগাতার হজ্জ-ওমরা করে যাও। কেননা এর অনুসরণ দ্বারা দারিদ্র্য ও গোনাহ মাফ হয়। যেভাবে কামারের হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে।’ সুনানে ইবনে মাজাহ ,খ:২, পৃ:৯৬৪, হাদীস নং: ২৮৮৭।

১৯. সাদাকাহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: 

﴿ إِن تُبۡدُواْ ٱلصَّدَقَٰتِ فَنِعِمَّا هِيَۖ وَإِن تُخۡفُوهَا وَتُؤۡتُوهَا ٱلۡفُقَرَآءَ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَيِّ‍َٔاتِكُمۡۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ٢٧١ ﴾ [البقرة: ٢٧١]   
“যদি তোমরা প্রকাশে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি খয়রাত গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কাজ-কর্মের খুব খবর রাখেন।”- সূরা আল বাকারা: ২৭১। 
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ المَاءُ النَّارَ ».
‘সাদাকাহ ঠিক সেভাবে গোনাকে দূর করে যেভাবে পানি আগুনকে নির্বাপিত করে।’- জামে তিরমিযি খ-২,পৃ-৫১২, হাদীস নং: ১৬৪।

২০. দণ্ডবিধান বাস্তবায়ন
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أيما عبد أصاب شيئا مما نهى الله عنه ثم أقيم عليه حده كفر عنه ذلك الذنب».
‘আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনও কাজ বান্দা করে ফেরার পর যদি তার উপর দণ্ড প্রয়োগ করা হয় তাহলে তা তার গোনাহর কাফ্ফারা হয়ে যায়।’- মুসতাদরাকে হাকেম, খ.৪, পৃ.১৪২।

২১. আল্লাহর নৈকট্যের আশায় যিকরের মজলিসে গমন
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ما من قوم اجتمعوا يذكرون الله لا يريدون بذلك إلا وجهه ، إلا ناداهم مناد من السماء أن تولوا مغفرور لكم ، وقد بدلت سيئاتكم حسنات».
‘কোন সম্প্রদায় যখন আল্লাহকে রাজি-খুশী করার উদ্দেশ্যে যিকরের জন্য জমায়েত হয় তখন আকাশ থেকে জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন যে, তোমরা সকলে (প্রভুর) ক্ষমা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করো আর তোমাদের সকল গোনাহ নেকীতে পরিণত করে দেওয়া হয়েছে।’ - মুসনাদে আহমাদ, খ-৩,পৃ. ১৪২।

উপসংহার
আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু। বান্দার প্রতি রহমদিল। সুতরাং তাঁর দরবারে আমাদের বিনম্রচিত্তে ইস্তেগফারের উদ্দেশ্যে নত হওয়া দরকার। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, গোনাহ যত দীর্ঘ হবে ততই শেকড় মজবুত হবে। যেমন: কেউ একটি গাছ উপড়াতে গিয়েও উপড়াল না বরং ফেলে রাখল, ভাবল পরের বছর উপড়ালেও চলবে কিন্তু পরের বছর এর শেকড় আরো মজবুত হল আর লোকটার শক্তিও কমে গেল, সুতরাং সে কি করে গাছ উপড়াবে? গোনাহকে ফেলে রাখলে পরিণতি এই-ই হয়। তাই আমাদের আজই এবং এখনই তওবা করা দরকার।

তাওবা সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা

তাওবা সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা

 .      আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনগণকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন:
﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴾ [النور: ٣١]
“হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারে।” সূরা আন-নূর : ৩১।

.      আল্লাহ তা‘আলা অপর আয়াতে বলেন:  
﴿إِنَّمَا ٱلتَّوۡبَةُ عَلَى ٱللَّهِ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسُّوٓءَ بِجَهَٰلَةٖ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٖ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَتُوبُ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمٗا ١٧ ﴾ [النساء: ١٧]
“আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের তাওবা কবুল করবেন যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তাওবা করে, ওরাই তারা, যাদের তাওবা আল্লাহ কবূল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” সুরা আন-নিসা : ১৭।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম মুহাম্মদ ইবন জারীর আত-তাবারী (রহ.) বলেন: অত্র আয়াতাংশ: ﴿ إِنَّمَا ٱلتَّوۡبَةُ عَلَى ٱللَّهِ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسُّوٓءَ بِجَهَٰلَةٖ ﴾ এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন যে, মু’মিনগণের মধ্যে যারা অসতর্কতাবশত গুণাহর কাজ করে অবিলম্বে যথা সময় যদি তারা আল্লাহর দরবারে তাওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাদের ছাড়া অন্য কারও তাওবা কবুল করেন না। অর্থাৎ যে সকল লোক তাদের মহান প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান রাখে তারা ভুলবশতঃ গুনাহর কাজ করার পর যদি যথাসময়ে সে গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে লজ্জিত হয়ে তাওবা করে এবং আল্লাহর আদেশ নিষেধ অনুযায়ী চলার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এমনিভাবে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে যে, সে মৃত্যু পর্যন্ত কৃত পাপ কার্য দ্বিতীয়বার করবে না, আল্লাহ তা‘আলা তাদের গুণাহসমূহ ক্ষমা করেন, এদের ব্যতীত অন্য কারও গুনাহ ক্ষমা করেন না। অত্র আয়াতে من قريب দ্বারা এ কথাই বুঝায়। তাবারী, পৃ.১১২

.      আল্লাহ তা‘আলা বলেন:.       
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ ٨ ﴾ [التحريم: ٨]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর বিশুদ্ধ তাওবা; তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যারা পাদদেশে নদী প্রবাহিত।” সূরা তাহরীম: ৭।

.      আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أَفَلَا يَتُوبُونَ إِلَى ٱللَّهِ وَيَسۡتَغۡفِرُونَهُۥۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٧٤ ﴾ [المائ‍دة: ٧٤]   
“তবে কি তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” সূরা আল-মায়েদাহ: ৭৪।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুহাম্মদ ইবন জারীর আত-তাবারী (রহ.) বলেন: “এই দুই কাফির দল, যাদের একদল বলে, মরিয়ম-তনয় মাসীহ-ই আল্লাহ; আরেক দল বলে, আল্লাহ তিনজনের মধ্যে একজন। তারা কি তাদের এ উক্তি থেকে ফিরে আসবে না? করবে না তাওবা এরূপ কুফরী কথাবার্তা থেকে? প্রার্থনা করবে না এজন্য আল্লাহর ক্ষমা? যে সকল বান্দা তাওবা করে এবং অবাধ্যতা পরিহার করে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যে ফিরে আসে, তিনি তাদের অপরাধ ক্ষমা করেন। সেই সাথে আল্লাহ তা‘আলার অপছন্দ কাজ পরিহার করে পছন্দজনক কাজের দিকে ফিরে আসে, তাদের তাওবা ও প্রত্যাবর্তনকে তিনি কবুল করে নেন। ফলে নিজ কৃপায় তাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেন।   

.      আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَأۡخُذُ ٱلصَّدَقَٰتِ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٤ ﴾ [التوبة: ١٠٤] 
“তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সাদাকা গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা আত-তাওবা: ১০৪।
মুহাম্মদ ইবন জারীর আত-তাবারী (রহ.) বলেন: এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে একটা ঘোষণা। মুনাফিকদের মধ্য হতে কেউ তাওবা করলে তার সে তাওবা কবুল করা হয় তাদের সাদাকা গ্রহণ করা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইখতিয়ারাধীন নয়। যারা মু’মিনগণের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে যোগদান হতে পিছিয়ে থাকার পর নিজেদেরকে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে এবং বলে, যে পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আমাদেরকে মুক্ত করেন, আমরা নিজেরা নিজেদেরকে মুক্ত করব না, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিজেদের পেশকৃত সাদাকাহ গ্রহণের অুনরোধ জানায়, তারা কি জানে না যে, তা করবার ইখতিয়ার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নেই। জানে না তারা যে, সেটা কেবল আল্লাহ তা‘আলার ইখতিয়ারাধীন? আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তার বান্দার তাওবা কবুল করেন কিংবা প্রত্যাখ্যান করেন। কোন বান্দা সাদাকা পেশ করলে আল্লাহ তা‘আলাই ইচ্ছা হলে তা গ্রহণ করেন অথবা রদ করেন। এ বিষয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন ইখতিয়ার নেই। কাজেই, তারা আল্লাহ তা‘আলার অভিমুখী হয়ে তাওবা করতে হবে এবং তাঁর সমীপেই সাদাকা নিবেদন করতে হবে। আর এর দ্বারা যেন আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিই তাদের লক্ষ্য হয়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কারও সন্তুষ্টি নয়। তাদের উচিত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাওবা করা এবং নিজেদের সাদাকা দ্বারা তাঁকেই খুশি করার চেষ্টা করা। তারা কি জানে না যে, ﴿ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ﴾  আল্লাহ তা‘আলাই তাওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু? অর্থাৎ বান্দাগণ যখন তাওবা করে ও তাঁর অভিমুখী হয় তখন তিনি তাতে সাড়া দেন এবং তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন। তারা যখন তাঁর অভিমুখী হয় ও তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তখন তিনি তাদের প্রতি দয়া করেন এবং তাদেরকে শাস্তি হতে অব্যাহতি দান করেন।

 .      আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَهُوَ ٱلَّذِي يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَعۡفُواْ عَنِ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ وَيَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُونَ ٢٥ ﴾ [الشورى: ٢٥] 
তিনিই তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন এবং তোমরা যা কর তিনি তা জানেন।” সূরা শূরা, ৪২:২৫।

 .      আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠ ﴾ [النساء: ١١٠]
‘যে গোনাহ করে কিংবা নিজের উপর যুলুম করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।’ সূরা আন-নিসা, ৪:১১০।

আল্লাহর রহমত অবারিত

বহু মানুষ নানা ধরনের গোনাহে লিপ্ত। এদেরকে যখন বলা হয়, তোমরা তওবা করে তখন এরা বলে, আমি এ থেকে কেন তওবা করব? তওবা করে করবটা কি (শুনি)! আমার গোনাহ অনেক ও বিশাল। এদের উদ্দেশ্যে বলব: মহান আল্লাহ বলেন: “আত্মার প্রতি যুলুমকারী আমার বান্দারা। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তিনি সকল গোনাহ মাফ করে দেবেন। কেননা তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা যুমার:৫৩)
      সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উপরোক্ত: আয়াতে কারীমাই আমার কাছে দুনিয়া ও এর মাঝে যা কিছু তার চেয়ে সেরা।
      ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: أكثراية فى القران فرحابهذه الاية المبا ركة কুরআনে বর্ণিত সর্বাধিক খুশীর আয়াত এটি।
      মহান আল্লাহ বলেন:
 ﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢ ﴾ [البقرة: ٢٢٢] 
“মহান আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।” (সূরা আল বাকারা: ২২২)
      আরও আল্লাহ বলেন:
  ﴿ وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠ ﴾ [النساء: ١١٠] 

“যে গোনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ঠ করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় পায়।” (সূরা আন নিসা: ১১০)

তওবার শর্তাবলী

জেনে রাখা দরকার যে, তওবার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। এ সকল শর্ত সাপেক্ষে কেবল তওবা কবুল হতে পারে; অন্যথায় নয়। গুনাহ যদি বান্দা ও আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট হয়; অপর কোন মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয় তবে তার জন্য তিনটি শর্ত। যথা:

১ম শর্ত: তৎক্ষণাৎ গুনাহ হতে বিরত থাকা।
২য় শর্ত: গুনাহের জন্য লজ্জিত হওয়া।
৩য় শর্ত: পুনরায় উক্ত গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
উল্লেখিত তিনটি শর্ত পূরণ না হলে তওবা কবুল হবে না।

আর অন্যায় যদি অন্য মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট হয় তবে তার জন্য চার টি শর্ত। উল্লেখিত তিনটি শর্তের সাথে চতুর্থ শর্ত হল, সম্ভব হলে যার অধিকার হরণ করা হয়েছে তার সাথে বিষয়টি সুরাহা করে নেয়া। যেমন, কারও অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করা হলে তা মালিকের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে। অগোচরে  কারও সমালোচনা করা হলে তার সাথে বিষয়টি মিটমাট করে নেয়া। তবে যদি তা সম্ভব না হয় তবে উক্ত ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে এবং তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করতে হবে।

সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তওবা করা আবশ্যক

তওবার সময় ফুরিয়ে যাবার পূর্বেই আমাদের তওবা করা আবশ্যক। কারণ, তওবার জন্য নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে আল্লাহ তওবা কবুল করবেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ
“আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করেন যতক্ষণ না কণ্ঠনালীর নিকট দম আসে (কিন্তু কণ্ঠনালীর নিকট দম এসে গেলে তখন আর তওবা কবুল করা হয় না)।”[9]

আল্লাহ বলেন,
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ
“ঐ সব  লোকের জন্য তওবা নেই, যারা পাপ করতে থাকে-এমন কি যখন মৃত্যু এসে যায় তখন বলতে থাকে এখন তওবা করছি।” ( নিসাঃ ১৮)

প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ
“পশ্চিম দিক হতে সূর্যোদয়ের পূর্বে (কিয়ামতের পূর্বে) যে তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন।”[10]


সুতরাং আমরা কি জানি কখন মৃত্যু দূত আমাদের দুয়ারে এসে উপস্থিত হয়? এমনও তো হতে পারে যে, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌঁছতে পারব না- এমন কি এই লিখাটিও পড়ে শেষ করার পূর্বেই আমার-আপনার দেহ হতে প্রাণ পাখি উড়ে যাবে। অতএব,আসুন আমরা দ্রুত তওবা করি। তওবার পথ এখনো উন্মুক্ত। আল্লাহ আমাদেরকে তওবা কারীদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন।

তওবার উপকারিতা

তওবার উপকারিতা

তওবা করলে তিনটি বড় বড় উপকারিতা লাভ হয়। যথা:

১ম: আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ পালন। আর তাঁর নির্দেশ পালনেই নিহিত আছে ইহ ও পরকালের পরম সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ।

২য়: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ। কারণ,তিনি দিনে একশ বার তওবা করতেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের মাধ্যমেই আল্লাহর ভালবাসা অর্জন করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ
“হে নবী,আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমার অনুসরণ কর তবে আল্লাহ ও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান: ৩১)

৩য়: তওবার মাধ্যমে গুনাহ সমূহ কেবল মোচন করা হয় না বরং সেগুলো নেকীতে রূপান্তরিত করে দেয়া হয়।  আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ
“কিন্তু যারা তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহ গুলোকে নেকী দ্বারা পরিবর্তিত করে দিবেন।” (সূরা আল ফুরকান: ৭০)

সুপ্রিয় দীনি ভাই ও বোন,‌ আমরা তওবার মহত্ব ও মর্যাদা এবং তওবা কারীর প্রতি মহান আল্লাহর ভালবাসা সম্পর্কে জানতে পারলাম। আরও জানতে পারলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্ব সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও সর্বাধিক আল্লাহকে ভয় কারী হওয়া স্বত্বেও কত অধিক পরিমাণে তওবা করতেন। তাহলে এখন আমাদের চিন্তা করার দরকার আমাদের কী করণীয়? বাস্তবতা হল, আমরা তো বড়ই দুর্বল। আমরা অসংখ্য পাপের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। তাই নয় কি?

অতএব, এখন আমাদের কর্তব্য, কাল বিলম্ব না করে তওবা করা এবং পাপের পুঁতি দুর্গন্ধময় জগত হতে বের হয়ে অনাবিল সুন্দর ও আলোকিত ভুবনে ফিরে আসা। আমাদের উচিৎ চির শান্তির নীড় জান্নাতের প্রত্যাশা করা এবং জান্নাতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিবেশী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা।

তওবাকারীদের প্রতি আল্লাহ অত্যন্ত আনন্দিত হন খুশি



আল্লাহ তায়ালা তওবা কারীদের অত্যন্ত ভালবাসেন। বান্দা যখন তার অপরাধের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন। আল্লাহ রব্বুল আলামীন বান্দার তওবাতে কী পরিমাণ আনন্দিত হন তা নিম্নোক্ত হাদীসটিতে দেখুন,

প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাদেম আবু হামযা আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
اللَّهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلَى بَعِيرِهِ ، وَقَدْ أَضَلَّهُ فِى أَرْضِ فَلاَةٍ
“কোনও লোক বিজন মরু প্রান্তরে উট হারিয়ে যাবার পর পুনরায় তা ফেরত পেলে যে পরিমাণ আনন্দে উদ্বেলিত হয় মহান আল্লাহ বান্দার তওবাতে তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন।”

আর সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে,
لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
“বান্দার তওবাতে আল্লাহ তোমাদের ঐ ব্যক্তি থেকে অধিক আনন্দিত হন, যে বিজন মরু প্রান্তরে তার উট হারিয়ে ফেলল। যাতে তার খাদ্য-পানীয় ছিল। উট হারানো কারণে হতাশ হয়ে গাছের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ল। এমন পরিস্থিতিতে সে হঠৎ দেখতে পেল তার উট তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে উটের লাগাম ধরে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বলতে লাগল, “হে আল্লাহ,তুমি আমার বান্দা আমি তোমার প্রভু!” অতি আনন্দের কারণে সে এভাবে ভুল কথা বলে ফেলল।”

আল্লাহু আকবর! কত বিশাল এ আনন্দ! নি:সন্দেহে এটি এত বড় আনন্দের বিষয় যা কারও পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়। আপনি নিজের কথা কল্পনা করুন যে, আপনি এমন এক মরুভূমিতে অবস্থান করছেন যেখানে আপনার আশে পাশে কোন মানুষ নেই। নেই কোন খাদ্য ও পানীয়। এমন জনমানব শূন্য মরুভূমিতে আপনার উট হারিয়ে গেছে যাতে আপনার খাদ্য-পানীয় মজুদ ছিল। আপনি অনেক খোঁজা-খুঁজি করেও উটের কোন হদিস পেলেন না। পরিশেষে, বেঁচে থাকার সব আশা ছেড়ে দিয়ে কোন গাছের নিচে শুয়ে অনিবার্য মৃত্যুর প্রহর গুণতে লাগলেন।

এমন পরিস্থিতি চোখ খুলেই হঠাৎ দেখতে পেলেন, আপনার উট আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গাছের সাথে তার লাগাম বাঁধা রয়েছে। তার উপরে খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি সব কিছু ঠিকমত আছে। তখন আপনি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উটের লাগাম হাতে নিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, “হে আল্লাহ তুমি আমার বান্দা; আমি তোমার প্রভু”। আনন্দে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আপনি উল্টো কথা বলে ফেললেন। আপনার উদ্দেশ্য ছিল এ কথা বলা, “হে আল্লাহ,তুমি আমার প্রভু;আমি তোমার বান্দা।”

আপনি কি কল্পনা করতে পারেন এ আনন্দ? আমার ধারণা,আপনি বলবেন, হ্যাঁ। তাহলে জেনে রাখুন, এমন অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর দুয়ার থেকে পুনর্জীবন লাভকারী ব্যক্তির চেয়েও আল্লাহ বান্দার তওবায় বেশি খুশি হন।

এটি মূলত: দয়াময় আল্লাহর সীমাহীন দয়া ও অনুগ্রহের অনুপম প্রমাণ বহন করে। তিনি এ কারণে বান্দার তওবাতে আনন্দিত হন না যে, আমাদের তওবা তাঁর বড় প্রয়োজন। তিনি এসব থেকে মুখাপেক্ষী হীন। বরং এটা তাঁর অন্তহীন দয়া, অপরিসীম ক্ষমা ও অনুপম ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

সুতরাং হে প্রিয় মুসলিম ভাই, কাল বিলম্ব না করে দ্রুত ছুটে আসুন এবং অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর নিকট তওবা করুন।

সহজ কিছু আমল যার মাধ্যমে আপনি জান্নাত পেতে পারেন


১- প্রত্যেক ওযুর পর কালেমা শাহাদত পাঠ করুণ (আশ্হাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহূ
أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ)
#এতে জান্নাতের ৮টি দরজার যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।(সহিহ মুসলিম- ৪৪১, হাদিস একাডেমি, পবিত্রতা অধ্যায়)

২- প্রত্যেক ফরজ সলাত শেষে আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা- আয়াত ২৫৫) পাঠ করুণ এতে মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাতে যেতে পারবেন।(নাসাই, সহীহ জামে’ ৫/৩৩৯, সিলসিলাহ সহীহাহ্‌ ৯৭২)

৩- প্রত্যেক ফরজ সলাত শেষে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং ১ বার (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর পাঠ করুণ
« لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ».)
#এতে আপনার অতীতের সব পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম হাদিস-১২৩৯, হাদিস একাডেমী)
#সেই সাথে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি পেয়ে যাবেন কেননা দিনে ৩৬০ বার এই তাসবিহগুলো পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হয় আর এভাবে ৫ ওয়াক্তে ৫০০ বার পড়া হচ্ছে। (সহিহ মুসলিম হাদিস-২২২০, হাদিস একাডেমী)

৪- প্রতিরাতে সূরা মুলক (৬৭ নাম্বার সুরা) পাঠ করুণ এতে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।(সহিহ নাসাই, সহিহ তারগিব, হাকিম-৩৮৩৯, সিলসিলাহ সহিহাহ-১১৪০, শায়খ আলবানী রঃ হাদীছটি হাসান সহিহ বলেহেন, দ্র: সহীহ তারগীব ও তারহীব, হা/ ১৪৭৫ ও ১৪৭৬)

৫- সুরা ইখলাস ৩বার পড়লে পুরো কুরআন খতমের সওয়াব (বুখারী- ৫০১৫)
#সুতরাং যত খুশী পড়ুন, চাইলেই প্রতিদিন শত শতবার কুরআন খতমের সওয়াব পেতে পারেন এভাবে—

৬- সকালে ১০০ বার ও বিকালে ১০০ বার সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি (سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهِ) পাঠ করুণ এতে আল্লাহ তা’লা আপনাকে সৃষ্টিকুলের সমস্ত মানুষ থেকে বেশী মর্যাদা দান করবেন। (সুনান আবু দাউদ তাহকিককৃত-৫০৯১)

৭- সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় (সন্ধ্যায় বলতে আসর থেকে মাগ্রিবের মধ্যে যে কোন সময়ে) ১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (سُبْحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهِ) পাঠ করুণ এতে কিয়ামতের দিন আপনার চেয়ে বেশী সওয়াব নিয়ে আর কেও উপস্থিত হতে পারবে না। (সহিহ মুসলিম-৬৫৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেসন)

৮- সকালে সূর্য ওঠার আগে এবং বিকালে সূর্য ডোবার আগে অর্থাৎ ফজর সলাত আদায় করে সূর্য ওঠার আগেই এবং বিকালে সূর্য ডোবার আগেই ১০০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০০ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ১০০ বার আল্লাহু আকবার এবং ১০০ বার (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর) পাঠ করুণ এতে মক্কায় ১০০ টি উট কুরবানির চেয়ে বেশী সওয়াব, জিহাদে ১০০ টা ঘোড়া পাঠানোর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, ১০০ টি গোলাম আযাদ করার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, এবং পৃথিবীর সব মানুষের চেয়ে বেশী সওয়াব হবে আপনার। (নাসাই সুনানে কুবরা- ১০৬৫৭, হাদিসটি সহিহ)

৯- ঘুমানোর পূর্বে বিছানায় গিয়ে ৩৩বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ, এবং ৩৪বার আল্লাহু আকবার পড়ুন, রাসুল সাঃ তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) এবং আলী (রাঃ)-কে এই আমল করার জন্য বিশেষভাবে নসিহত করেছেন (বুখারী- ৩৭০৫, তাওহীদ পাবলিকেশন)

১০- বাজারে প্রবেশ করে- (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু য়্যুহয়ী ওয়া য়্যুমীতু ওয়া হুয়া হাইয়ুল লা য়্যামূত, বিয়াদিহিল খাইরু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ حَيٌّ لاِ يَمُوتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ».)
পাঠ করুণ এতে ১০ লক্ষ পুণ্য হবে, ১০ লক্ষ পাপ মোচন হবে, ১০ লক্ষ মর্যাদা বৃদ্ধি হবে এবং জান্নাতে আপনার জন্য ১ টি গৃহ নির্মাণ করা হবে। (তিরমিজি তাহকিককৃত -৩৪২৮,৩৪২৯ শাইখ আলবানী হাদিসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন)

১১- বাড়িতে সালাম দিয়ে প্রবেশ করুণ এতে আল্লাহ তা’লা নিজ জিম্মাদারিতে আপনাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (ইবনু হিব্বান-৪৯৯, সহিহ তারগিব-৩১৬)

১২- জামাতে ইমামের প্রথম তাকবীরের সাথে ৪০ দিন সলাত আদায় করুন অর্থাৎ দেরিতে নয় বরং সলাত আরম্ভ হওয়ার সময়ই শরিক হওয়া এতে আপনি নিশ্চিত জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। (সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] - হাদিস ২৪১, তাকবিরে উলার ফজিলত অধ্যায়)

১৩- জুমার দিন ১- গোসল করে ২- পায়ে হেটে ৩- আগে আগেই মসজিদে গিয়ে ৪- ইমামের পাশাপাশি বসে ৫- মনোযোগের সাথে খুতবা শুনলে বারি থেকে হেটে আসার প্রতি কদমে ১ বছর সারা রাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং ১ বছর টানা সিয়াম পালন করার সওয়াব পাবেন (সুনান তিরমিজি তাহকিককৃত- ৪৯৬)
তাহলে যদি কোন ব্যক্তি এই সর্তগুলো পুরন করে তবে সে যদি বাড়ি থেকে ১০০০ পা ফেলে মসজিদে যায় তবে তার জন্য ১০০০ বছর একটানা সারা রাত তাহাজ্জুদ নামাজের সওয়াব এবং ১০০০ বছর একটানা সিয়াম পালনের সওয়াব দেওয়া হবে, (সুবহানাল্লাহ), এবং কদম যতো বারতে থাকবে সওয়াবও এই একই অনুপাতে বারতে থাকবে।

১৪- সাধ্যমত বেশি বেশি জানাজা সলাতে শরিক হবেন কেননা শুধু জানাজা সলাতে শরিক হলেই এক কীরাত সওয়াব দেওয়া হয় আর দাফন পর্যন্ত থাকলে ২ কিরাত সওয়াব দেওয়া হয় আর ২ কিরাত অর্থ দু’টি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সাওয়াব) (বুখারি- ১৩২৫, জানাজা অধ্যায়)

১৫- প্রতিমাসের আয়ের একটা অংশ এতিমখানা বা মসজিদ মাদ্রাসা বা গরিব-দুখি, বিধবা ও দুস্থদের মাঝে দান করবেন হোক সেটা অতি অল্প এতে আপনি আল্লাহ তা’লার কাছে জিহাদকারির সমতুল্য হবেন। (বুখারি-৬০০৭, তাওহীদ পাবলিকেশন)

১৬- মহিলারা ৪টি কাজ করবেন, ১- ৫ ওয়াক্ত সলাত ২- রমজানের সিয়াম, ৩- লযযাস্থানের হেফাজত, ৪- স্বামীর আনুগত্য করুণ এতে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। (সহিহ ইবনু হিব্বান-৪১৬৩, মুসনাদে আহমাদ-১৬৬১, তবরানি কাবির-৯৯১)

১৭- মসজিদে ফজরের সলাত আদায় করে বসে দোয়া জিকির পাঠ করুণ এবং সূর্য উঠে গেলে ২ রাকাত ইসরাকের সলাত আদায় করুণ এতে আপনি প্রতিদিন নিশ্চিত কবুল ১ টি হজ্জ ও ১ টি উমরার সওয়াব পাবেন আর কবুল হজ্জের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। (সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] – ৫৮৬, জুমু’আর নামায অধ্যায়)

(মহিলারাও বাড়ীতে ফজর সলাত আদায় করে যদি মুসল্লায় বসেই দোয়া জিকির পাঠ করে এবং সূর্য উঠে গেলে ২ রাকাত ইসরাকের সলাত আদায় করে তাহলে তারাও এই সওয়াব পাবে বলে শাইখ বিন বাজ রঃ-এর ফতওয়া রয়েছে সুতরাং চাইলেই এই বিশাল সওয়াব প্রতিদিন ই অর্জন করা সম্ভব)

বি দ্রঃ ফরজ ইবাদতগুলো করার পাশাপাশি শির্ক, বিদআত ও হারাম ভক্ষণ থেকে দূরে থেকে (কেননা এই ৩পাপে লিপ্ত থাকলে কোন ইবাদতই কবুল করা হয়না) যে কেও এই অতি সহজ আমলগুলো করবে সে সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে ইন শা আল্লাহ। কিয়ামতের দিন পাপ পুণ্য মিজানের পাল্লায় মাপা হবে, পুণ্যের পাল্লা ভারি হলেই কেবল জান্নাত পাওয়া যাবে তাই আমলগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পুণ্যের পাল্লা ভারি করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, আল্লাহ তাওফিক দিন।